ডার্বি’র ইতিহাস!

1 0
Read Time:6 Minute, 3 Second

নিউজ ডেস্ক (অনামিকা নন্দী): প্রায় ৯’দিনের কাছাকাছি বাকি গোয়ায় আইএসএল শুরু হতে। তবে এই বছরের আইএসএল অন্য বছরের থেকে তুলনামূলক আলাদা। এবছর আইএসএল-এ যুক্ত হয়েছে কলকাতার দুই প্রধান দল। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান। লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুনে’র প্রতিদ্বন্দিতা আজকের নয়, ১০০ বছরের পুরনো। সেই প্রতিদ্বন্দিতাকে ফের জাগ্রত করে তুলছে চলতি বছরের আইএসএল। কলকাতার এই দুই প্রধান দল ময়দানে খেলতে নামলে, প্রতিদ্বন্দিতা শুধু এই দুই দলের মধ্যে তৈরি হয়না। তৈরি হয় দর্শকদের মধ্যেও। তার নজির আমরা বহুবার পেয়েছি।

ছবি: সংগৃহীত

আইএসএল-এ নতুন নজির গড়ার আগে, যদি লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুন’র ইতিহাস ঘাটতে যাই তাহলে, ফুঁটে উঠবে অন্য কাহিনী। মূলত লাল-হলুদ আর সবুজ-মেরুন’র ম্যাচকে ঘিরে হত কলকাতা ডার্বি ম্যাচ। দুই দলের মধ্যেকার প্রতিদ্বন্দ্বীতা প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। দর্শকদের উপস্থিতির মধ্যেও দেখা যেতো প্রতিদ্বন্দ্বীতা।

ছবি: সংগৃহীত

কলকাতার এই দুই প্রধান ক্লাব একবারে কমপক্ষে তিনবার ডার্বিতে অংশ নিয়েছে। এই দুই দলকেই ফেডারেশন কাপ, ডুরান্ড কাপ, আইএফএ শিল্ড সহ অন্যান্য প্রতিযোগিতায় ডার্বিতে অংশ নিতে দেখা গিয়েছে। গোটা বিশ্ব জুড়ে বিশাল অনুরাগী সম্পন্ন এই দুই দল বাঙ্গালীদের কাছে এক আবেগের জায়গা। বাংলার পশ্চিমাংশের লোকেদের কাছে মোহনবাগান সেরা। অন্যদিকে পূর্বাংশের লোকেদের কাছে ইস্টবেঙ্গল সেরা। বলতে গেলে ময়দানে প্রতিদ্বন্দিতা শুধু মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের মধ্যেকার ছিল না। প্রতিদ্বন্দিতা ছিল বাঙাল আর ঘোঁটি’র মধ্যে।

ডার্বি মূলত স্কটিশ প্রিমিয়ার লিগের একটি পুরাতন ফর্ম। বলতে গেলে ‘ন্যাটিভিস্ট’ ও ‘অভিবাসী’ জনসংখ্যার এক প্রতিদ্বন্দিতা দেখা যেতো ময়দানে। ভারতের প্রাচীনতম ফুটবল ক্লাব মোহনবাগান। যার উৎস ধরেই এই ডার্বির আহ্বান। প্রথম কলকাতা ডার্বি অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৫ সালে। যা’তে ইস্টবেঙ্গল জয়লাভ করে ১-০ গোলে। ডার্বি ম্যাচ জিততেই খেলোয়াড়রা বেশি আগ্রহী।

ছবি: সংগৃহীত

১৯২৫ সালে ইস্টবেঙ্গল জয়ের পর ১৯৬০-র দশকে সুবর্ণ সুযোগ পায় মোহনবাগান। অন্যদিকে সত্তরের দশক ইস্টবেঙ্গলের দশক ছিল। ৬ বছরের মধ্যে তাঁরা শুধু একটি ডার্বি হেরেছিল। ১৯৭৫ সালে আইএফএ শিল্ডে ৫-০ গোলের রেকর্ড করে জয় হাসিল করে ইস্টবেঙ্গল। সেইসময়ের কোচ ছিলেন প্রদীপ কুমার বন্দোপাধ্যায়। আইএফএ শিল্ডে সবথেকে বড় ব্যবধানে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে পরাজিত করে।

এরপর এক কালো সময়ের মুখোমুখি হতে হয় সকলকে। ফুটবলের ইতিহাসে এক দুর্ঘটনা ঘটে যায় ১৯৮০-র দশকে। ইডেন গার্ডেন্সে ডার্বি ম্যাচ দেখতে এসে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৬জন সমর্থক। যা ছিল ভারতীয় ফুটবলের জন্য এক কালো দিবস। এরপর সমস্ত কিছুকে পার করে ১৯৯৭ সালে ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনাল রেকর্ড করে ফুটবলের ইতিহাসে। অনেকগুলি রেকর্ডের মধ্যে সবচেয়ে স্মরনীয় হয়ে থেকেছে এই ডার্বি ম্যাচ। ১৩১,০০০ লোকের ভিড়ে কলকাতার বিবেকানন্দ যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে, ৪-১ ব্যবধানে জয়ী হয় ইস্টবেঙ্গল। তা নিয়ে যেতে সাহায্য করে বাইচুং ভুটিয়া।

ছবি: সংগৃহীত

এরপর ডার্বি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। যেই ডার্বিতে হ্যাটট্রিক করেছিলেন একজন বিদেশি ফুটবলার। তিনি ছিলেন একজন নাইজেরিয়ান স্ট্রাইকার। নাম চিডি এডে। তারপর ২০১৫ সালের ডার্বিতে ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানকে ৪-০ ব্যবধানে পরাজিত করে। সবমিলিয়ে ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের জয় বেশি হলেও, প্রত্যেকটি ম্যাচে দর্শকদের উত্তেজনা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা উভয়ই থাকতো তুমুল। যদিও বা চলতি বছরের পরিস্থিতিতে সেই উত্তেজনা ও প্রতিদ্বন্দিতা লাইভ স্টেডিয়ামে দেখতে পাব না আমরা। কিন্তু ভার্চুয়ালি তার উপভোগ সবাই করতে পারব।

কলকাতা ডার্বি ম্যাচের উত্তেজনার মত, চলতি বছরের আইসিএল নিয়েও একই পরিমাণ উত্তেজনা দর্শকদের মধ্যে রয়েছে! তা বললে ভুল হবে না। তার কারণ যদিও বা কলকাতার এই দুই প্রধান দল। তবে ইতিহাস বলছে এই দুই দল ময়দানে নামলে, এক অন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাক্ষ্মী থাকবে সকলে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!