বাংলার মেয়ে ও মা – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

0 0
Read Time:8 Minute, 17 Second

নিউজ ডেস্কঃ বাংলার মানুষের জানা হয়ে গেছে নীল বাড়ি কার দখলে রইল। এই নীল বাড়ি দখলের লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার যাত্রাটা ,তার এই অনবদ্য জয়ের কাহিনী- জানার আগে আসুন দেখে নেওয়া যাক তৃণমূল কংগ্রেস দলটা গঠনের পর থেকে এখনো পর্যন্ত তার লড়াইয়ের ছকটা কি রকম ছিল।

মোটের উপর প্রায় ৪৮ শতাংশ ভোট পেয়েছে তৃণমূল। অতীতে কোনও বিধানসভা বা লোকসভা নির্বাচনে এত আসন পায়নি তারা। ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোট ৬টি লোকসভা এবং ৫টি বিধানসভা ভোটে লড়েছে। বিধানসভা ভোটের নিরিখে, এখনো পর্যন্ত সেরা ফল হয়েছিল ২০১৬ সালে। ৪৪.৯১ শতাংশ ভোট পেয়ে ২১১টি আসনে জিতেছিল জোড়াফুল। ভোটের পাশাপাশি আসন প্রাপ্তির হিসেবেও এবারেও সেই সংখ্যাকে ছাপিয়ে দিয়েছে।

২০১১-র বিধানসভা ভোটে ৩৮.৯৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল দল। ২২৬টি আসনের মধ্যে ১৮৪টি আসন দখল করেছিল তৃণমূল।

শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের সেরা ফল ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে। আসনসংখ্যা কমে ২২ হলেও ৪৩.৩ শতাংশ ভোট পেয়েছিল তৃণমূল। তার পাঁচ বছর আগে ২০১৪-র লোকসভা ভোটে জোড়াফুলের প্রার্থীরা ৩৪টি আসনে জিতেছিলেন। যা ছিল প্রায় ৩৯.০৫ শতাংশ।

দলের এই লড়াইয়ের মূল কান্ডারী হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাকে বাংলার মেয়ে বলেই জানে গোটা দেশ। যাকে কেন্দ্র করেই স্লোগান তৈরি করেছিল দল ” বাংলা নিজের মেয়েকেই চায়”।

নামটা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যিনি বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের রাজত্বকে অবসান ঘটিয়ে নিজের দলের শাসনকাল তৈরি করেছেন। সিঙ্গুরের বামফ্রন্টের দিয়ে দেওয়া জমি টাটা কোম্পানির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কৃষকদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন, এই লড়াকু, বিপ্লবী প্রকৃতির মহিলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে, এটুকুর জন্যই বাংলার মানুষ, বাংলার জমি তথা সম্পূর্ণ বাংলা তাকে ভালোবাসে না। বাংলার ভাল সময়, বিপদের সময়, এক কথায় সবসময় যেন তিনি আগলে রেখেছেন নিজের রাজ্যকে। আম্ফানের মত ঝরে যখন কাবু হয়ে গিয়েছিল বাংলা। তখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে তিনি পথ নির্দেশক হিসেবে কাজ করেছিলেন। করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় যখন ৭০ ঊর্ধ্ব সকল মন্ত্রীরা বাড়ি থেকে বের হচ্ছেন না, তিনি কিন্তু একজন ৬০ বছর বয়সী মহিলা হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়িয়েছেন, বাজারে – বাজারে গিয়ে মানুষকে দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বোপরি, একজন দলনেত্রী হিসেবে, বয়স্ক মন্ত্রীদের বাড়ি থেকে না বেরোনোরও পরামর্শ দেন তিনি। অর্থাৎ একজন বাংলার মা এবং দলনেত্রী হিসেবে নিজের কাজ সর্বদা এগিয়ে নিয়ে গেছেন।

বাংলার মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়িয়ে তোলার জন্য তিনি চালু করেন কন্যাশ্রী প্রকল্প। যার জন্য বিশ্বের কাছে তিনি প্রশংসাও কুড়িয়েছেন। অসহায় গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য তিনি সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। উন্নত করেছেন বাংলার চিকিৎসা পরিকাঠামোকে। বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে গেলে কার্যতঃ বিনামূল্যেই চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়েছে। যা একমাত্র সম্ভব হয়েছে বাংলার মেয়ের জন্য।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামটাই যেন সম্পূর্ণ বিজেপি দলের একমাত্র বিরোধী প্রতিপক্ষ হিসেবে হয়ে উঠেছিল। যাকে হারিয়ে যেন বিজেপির মত দাবি করা প্রথম সারির দলও পরম তৃপ্তি লাভ করত। একটা ছোট্ট মাত্র পাঁচ ফুটের মহিলার হাত থেকে বাংলাকে কেড়ে নেওয়ার জন্য বিজেপি তাবড় – তাবড় নেতারা বাংলায় একাধিকবার এসে সভা করে গেছেন। বাংলার মানুষকে তারা আশ্বাস দিয়ে গেছেন তারা ক্ষমতায় এলেই ডবল ইঞ্জিন সরকার কাজে নেমে পড়বে। বাংলাকে সোনার বাংলা গড়ে দেবেন। কোথাও আবার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলতে শোনা গেছে তৃণমূলের নেতাদের তারা দেখে নেবেন।

এখানেই শেষ নয়, যেখানে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা ভেবেছিল ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে তৃণমূল নামটাই মুছে যাবে তাই তারা আগেভাগেই দলবদল করে নিয়েছিলেন। তাদের পূর্ব পরিকল্পনাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিলেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচনে জয়লাভের পর হিসেব বলছে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে প্রায় ৫০ এর কাছাকাছি নেতারা যোগদান করলেও, জয়লাভ করেছেন মাত্র ৬ জন দলত্যাগী নেতা। এই একুশের নির্বাচনের আগেই কার্যত একলা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সমস্ত তাবড় তাবড় নেতারা যখন তাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছিলেন তখন কার্যত তিনি খানিকটা ধৈর্যহীন এবং উৎসুক হয়ে উঠেছিলেন। সেই সময় তৃণ শিবিরে যোগদান করা এমন অনেক নতুন মুখে বলতে শোনা গেছিল, তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা দিদিকে ছেড়ে গেছে তাতে কি হয়েছে আমরা তো আছি দিদির সাথে! যা শুনে যেন কার্যত বুকে বল পেয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

তৃণমূলকে বাংলা থেকে মুছে ফেলার জন্য এখানেই শেষ নয়, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ক্রমাগত নির্বাচনের সময়ও টার্গেট রেখেছিল তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের দিকেই। জাতি বাংলার মানুষ তৃণ শিবিরকে চোর কিংবা ডাকাত বলে ভাবে আর সেই সুযোগেই অন্য রাজনৈতিক দল নতুন সরকার গড়বে। কিন্তু তা আর হল কই! বিজেপির এই সহজ বাংলায় মাটিকে মূলত কঠিন করে দিয়েছেন একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার বিকল্প হয়না। এদিকে বাংলার মানুষ বুঝে গেল তার লড়াইয়ের ময়দানে যতই বিপদ তথা শত্রু আসুক না কেন, তিনি সহজেই অতিক্রম করে যাওয়ার ক্ষমতা রাখেন। যতই বলা হোক না কেন ততই যেন কম থেকে যায়! পরিশেষে, তৃতীয়বার সরকার গঠনের জন্য শুভেচ্ছা জানাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!