বাংলার ভালোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁতে রাজি আছি: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নিউজ ডেস্ক: গতকাল পশ্চিমবাংলা ও উড়িষ্যায় বিধ্বংসী জায়গাগুলির আকাশপথে পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উড়িষ্যায় প্রশাসনিক বৈঠক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পশ্চিমবাংলার কলাইকুন্ডায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিল। কিন্তু সেই বৈঠকের রাজ্যপাল থেকে বিরোধী দলের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। আর তারপরেই মুখ্যমন্ত্রী সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে চান না। কিন্তু সেই বৈঠক নিয়ে করা হয়েছে রাজনীতি। যা নিয়ে আজকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমি সফরসূচি ঘোষণার পরের দিন জানতে পারি, প্রধানমন্ত্রী কলাইকুণ্ডায় আসতে চলেছেন। আমরা সফরসূচি কাঁটছাট করেছি। আমাকে সাগরে ২০ মিনিট অপেক্ষা করতে বলেছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতর। প্রধানমন্ত্রীর চপার নামার পর অনুমতি দেওয়া হবে। আমরা ২০ মিনিট অপেক্ষা করছি। আমি সেখানে পৌঁছলে দেখতে পাই প্রধানমন্ত্রী পৌঁছে গিয়েছেন।
সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগে জানতাম মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক। গিয়ে দেখলাম রাজ্যপাল, বিধায়ক, বিরোধী দলনেতা ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রীরা রয়েছেন। বিজেপি নেতাদের মাঝে আমি একা। সৌজন্য রাখতে দেখা করি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। ঘরে ঢুকে প্রধানমন্ত্রীকে বলি, আমাদের দিঘায় যেতে হবে। ঘূর্ণিঝড় বিধ্বস্ত এলাকায় পরিদর্শন করতে এসেছি। আবহাওয়ার জন্য সেখান থেকে কলাইকুণ্ডায় আসা কঠিন ছিল। আমরা রিপোর্ট দিতে চাই। আমি রিপোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে দিই। তার পর বলি, আপনার অনুমতি নিয়ে আমি দিঘায় যাচ্ছি। তাহলে আমাদের দোষ কোথায়? গুজরাটে কেন বিরোধী দলনেতাকে ডাকলেন না প্রধানমন্ত্রী? ওড়িশায় বিরোধী নেতাকে ডাকা হয়নি। আমার রাজ্যে এসে আপনি সংঘাতের আবহ তৈরি করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, তিনবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে চলে এসেছি। ইচ্ছাকৃতভাবে খালি আসন রাখা হল। আমি রাজনীতির লোকদের দেখলাম। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী-প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে থাকতে পারেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এখন বৈঠক ডাকছেন। প্রধানমন্ত্রী বৈঠক ডাকছেন। আমরা প্রতিটি বৈঠকে থেকেছি। মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব থেকে অর্থসচিব -সকলে প্রতিটা বৈঠকে ডাকেন। বাংলার উন্নতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর পা ছুঁতেও রাজি। কিন্তু আমাকে এভাবে অপমান করবেন না। বাংলাকে বদনাম করবেন না। আপনারা হার হজম করতে পারছেন না। প্রথম দিন থেকে সংঘাতে জড়াচ্ছেন। আমি যখন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর অনুষ্ঠানে গিয়েছি, তখন কী হয়েছিল? আপনারা দেখতে পেয়েছেন। কোভিড নিয়ে বৈঠকে আমাকে ডেকেও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, মুখ্যসচিবের কি দোষ? তিনি আমার সঙ্গে কাজ করছেন। মুখ্যসচিব রাজ্য সরকারের অফিস। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানকে ডাকছেন। ৩১ মার্চ যোগ দিতে বলছেন। ৩ মাসের জন্য তাঁর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তাঁরা সাড়া দিয়েছেন। ১৫ দিন পর জবাব পাই। ৩ মাসের মেয়াদ বৃদ্ধির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কোন আইনে চলে আসতে বলছেন! শুধু আমাকে নয়, মুখ্যসচিবকেও বিব্রত করছেন। আমাকে অসম্মানিত, অপমানিত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে খবর পাঠানো হয়। তারপর মন্ত্রীদের দিয়ে বলানো হয়। আমরা সাইক্লোনের জন্য কাজ করছি, তখন আমাকে বদনামের ছক সাজানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আপনার দুটো পা ধরলে খুশি হতেন, আমি বাংলার জন্য করতে পারি। দয়া করে এই নোংরা খেলা খেলবেন না। মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা শেষ করুন। এই চিঠি প্রত্যাহার করুন।
সাংবাদিক বৈঠকে করোনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোভিড সংক্রমণের হার ৩৩ শতাংশ থেকে নেমে গিয়েছে ১৮-১৯ শতাংশে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে ০.৩৬%। প্রথম ঢেউয়ে ছিল ১.৬৭ শতাংশ। আমরা হকার, বাস চালক, হকার, মৎস্য বিক্রেতা, পুলিস, প্যারা টিচারদের টিকায় অগ্রাধিকার দিচ্ছি। সরকারের তরফে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টিকা দিতে পেরেছি। কোভিড টিকাকরণে ১ নম্বরে আছে বাংলা। ৩ কোটি ভ্যাকসিন চেয়েছি। ২ কোটি আমরা দেব। ১ কোটি বেসরকারি সংস্থাকে দেব।