প্রিয় শিল্পীকে সামনে থেকে দেখার স্বপ্ন ছিল
নিউজ ডেস্ক অন্য অনেকের মতো ওঁদেরও স্বপ্ন ছিল, সামনে থেকে এক বার তাদের প্রিয় শিল্পীকে দেখার। কিন্তু সুযোগ ছিল না। অবশেষে সেই সুযোগ এল কিন্তু তখন তিনি ময়না-তদন্তের জন্য টেবিলে শুয়ে রয়েছেন ‘তড়প তড়প কে ইস দিল সে.’র গায়ক কেকে। তার নিথর দেহ ব্যবচ্ছেদের জন্য ছুরি-কাঁচি এগিয়ে দিতে গিয়ে হাত কেঁপে গিয়েছিল।
কিছুতেই ঘোর কাটছিল না এসএসকেএমের মর্গের তিন কর্মীর।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা ময়না-তদন্তের গোটা কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন আনন্দ মল্লিক, ভিকি মল্লিক ও সঞ্জয় মল্লিক। মর্গের পিছনের কোয়ার্টার্সের বাসিন্দা ওই তিন কর্মীর । মেডিসিন বিভাগের প্রধান চিকিত্সক ইন্দ্রাণী দাসের ফোন জানানো হল সকাল ১০টার মধ্যে আসতেই হবে। ”ভিআইপি-র দেহের ময়না-তদন্ত হবে। সিএমআরআই হাসপাতাল থেকে আসবে।” তখনও ওঁরা অবগত নয় কে এই ভিআইপি।
নিয়মানুযায়ী কার দেহের ময়না-তদন্ত সেটা আগাম জানানো হয় না ।কাজে যোগ দেওয়ার পরে তাঁরা জানতে পারেন। এ দিন ভিকি বলেন, ”বাড়ি থেকে বেরনোর সময় টিভি-র খবরে এক ঝলক দেখলাম, কেকে-র দেহ ময়না-তদন্তের জন্য এসএসকেএমে আনা হচ্ছে। ভাবতেই পারছিলাম না, প্রায় সাত বছর ধরে পিজি-র মর্গে চাকরি করছেন ভিকি আনন্দ বছর পঁয়তাল্লিশের সঞ্জয় অবশ্য প্রায় ১০ বছর ধরে মর্গে কর্মরত। এত বছরের কর্মজীবনে অসংখ্য দেহের ময়না-তদন্তের কাজ করেছেন। কিন্তু তা-ও যেন মনের ভিতরে একটা কষ্ট হচ্ছিল।”
শববাহী গাড়ি পিজি-র মর্গে পৌঁছনোর পরে কেকে-র দেহ নামিয়ে তা সরাসরি ব্যবচ্ছেদের ঘরে নিয়ে গিয়ে টেবিলে তোলার সময়ে যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না আনন্দের। বললেন, ”ওম শান্তি ওম সিনেমার ‘আঁখো মে তেরি আজব সি’র গায়ককে হাতে ধরে টেবিলে শোয়াচ্ছি, মনে হচ্ছিল, উনি যেন ঘুমোচ্ছেন।” ভাবতেই পারছিলাম না ময়না-তদন্তের জন্য প্রস্তুত হয়েও থমকে গিয়েছিলেন। ভিকির কথায়, ”যাঁর এত সব জনপ্রিয় গান শুনেছি, তাঁকে এক বার সামনে থেকে দেখার স্বপ্ন ছিল । কিন্তু তাঁকে যে এই ভাবেদেখব, তা কল্পনাও করিনি।” ব্যবচ্ছেদের পরে শিল্পীর দেহ সেলাই করেন আনন্দ, ভিকিরা। খুব যত্ন করে স্নান করিয়ে প্রিয় গায়ককে পরিপাটি করে হাসপাতালেরই দু’টি সাদা চাদরে মুড়ে কফিনে শুইয়ে পুলিশের শববাহী গাড়িতে তুলে দেন ।
”কিছু কিছু ঘটনায় হয়তো ক্ষণিকের কষ্ট দেয়। কিন্তু এই ঘটনা সারা জীবন মনে থাকবে।” বাড়ি ফেরার পরে পরিজন, বন্ধুদের প্রশ্ন ছিল, ”কী দেখলি? কী হয়েছিল?’চোখের সামনে বার বার টেবিলে শোয়ানো মুখটা ভেসে উঠছিল।” আর আনন্দ বলছেন, ”হম রহে ইয়া না রহে কাল-এর শিল্পীকে ছোঁয়ার সময়ে মনে হচ্ছিল, স্যর আপনি থাকবেন, আপনার গানে।”