অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া দুঃসাহসিক অভিযানে পিয়ালী

0 0
Read Time:5 Minute, 39 Second

নিউজ ডেস্ক::পর্বতারোহী পিয়ালী বসাকের অতিরিক্ত অক্সিজেন ছাড়া দুঃসাহসিক অভিযান ধৌলাগিরি, এভারেস্ট ও লোৎসে জয়ের রোমহর্ষক কাহিনী অবলম্বনে তৈরি হল তথ্যচিত্র “ডাকছে”।

তথ্যচিত্রে পিয়ালী বসাক উদ্যোগ শক্তি সাহস ধৈর্যের ও বিনম্রতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। বাংলার পর্বত আরোহনের নতুন গর্ব, আশা, ভরসার দিশারী হয়ে এক মাইলস্টোনে পরিণত হয়েছেন সে।

“ডাকছে” কেন ছবির নাম। পিয়ালী জানিয়েছেন , নামের সার্থকতা এখানে এটাই যে, আমাকে ছোট থেকেই পাহাড় ডাকছে , প্রকৃতি ডাকছে , সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ডাকছে। শুধু জয়ই শেষ কথা নয়, সমাজে তাকে এখন আরও প্রয়োজন। সমাজ বয়ে চলেছে নদীর স্রোতের মতো। প্রতিনিয়তই প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে মানুষ পাড় হয়ে চলেছেন মুক্তির দিকে।

প্রতিদিনের মতোই পিয়ালী মর্নিং ওয়ার্ক ও পর্বতারোহণের কঠোর প্র্যাকটিসের প্রতি মনোনিবেশ করেছে।
সে পাথরের উপর বসে গঙ্গার দিকে স্রোতের প্রবাহ দেখছে। পা দুটো তার একটি পাথরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে চলেছে। সে এক এক সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে চলেছে।
তার অভিযান লগ্নেই মহাত্মা গান্ধীর পাদস্পর্শে হাতে লাঠি নিয়ে অভিযান তাকে আপ্লুত করে। বিনয়ী মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধের প্রারম্ভে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণের চারঘোড়ার সম্মুখে সে দাঁড়িয়ে গীতার বাণী অন্তঃস্থ করছে। সৌভ্রাতৃত্ব বোধ, উটের পা ও তার উচ্চ গ্রীবার মতো আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সঙ্গে নিয়ে, পূর্ণ বিশ্বাস ও ভক্তি কে পাথেয় করে সে পাহাড় দেবের কাছে প্রার্থনা জানায়। তাকে তার কাছে স্থান দেয়।

ছোটবেলাতেই ট্রেক করেন কেদার, গঙ্গোত্রী-গোমুখ, বৈষ্ণোদেবী, রোটাং পাশ।এরপরে ভর্তি হন স্থানীয় রক ক্লাইম্বিং কোর্সে। অল্প সময়েই বুঝে গিয়েছিলেন রক ক্লাইম্বিং মধ্যবিত্তের জন্য নয়। বড় হওয়ার বিভিন্ন ধাপে জানতে পারেন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট থেকে বেসিক কোর্স করলে স্পনসরশিপ অ্যাপ্লাই করা যায়। কিন্তু তার জন্যও নির্দিষ্ট বয়স আছে। নির্ধারিত বয়সের চেয়ে কম হওয়ার ফলে সেই কোর্স করা যাচ্ছিল না। কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেননি তিনি। ২০০৬ সাল, টিউশনের মাইনে থেকে টাকা বাঁচিয়ে পারি দেন নেপাল। লক্ষ্য গাইড, পোর্টার এর কাজ করা। ভেবেছিলেন ওখানে গেলে রোজগার হবে, বাবা মা’কে সাহায্যও করতে পারবেন আর আমার হিমালয় চড়াও হবে। সিঙ্গালিলা ফরেস্টের ভেতর দিয়ে নেপালের ইলিয়াম জেলা পৌঁছান। ঠান্ডায় জল জমে বরফ হয়ে যাচ্ছে। এদিকে সম্বল প্রায় কিছুই নেই। বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন ‘আর্ট এগজিবিশন’ দেখতে যাচ্ছেন, শেষে বাড়ির লোক পুলিশে নিখোঁজ ডায়েরি করে। ফিরে আসতে হয় বাড়িতে। এরপর ফের শুরু হয় পারিপার্শ্বিকের সঙ্গে লড়াই। একদিকে আর্থিক অসঙ্গতি , সামাজিক চাপ অপরদিকে মেয়ের এভারেস্ট জয়ের স্বপ্ন। পাল্লা ক্রমে হেলে যাচ্ছিল পিয়ালির স্বপ্নের বিপরীত দিকে। স্বপ্ন ভেঙে যেতে বসার ভাবনা মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভাঙতে শুরু করে তাঁকে। ২০০৮ , ফিরে আসার বছর। পাশে এসে দাঁড়ান মাউন্টেনিয়ারিংয়ের স্যার অপূর্ব চক্রবর্তী। হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিংয় ইন্সটিটিউট থেকে বেসিক কোর্স করার আর্থিক দায়িত্ব পুরোটাই নেন তিনি। এরপর শুধুই এগিয়ে যাওয়া। এক এক করে মুলুকিয়া (৫৮৯৫ মিটার), মাউন্ট ভাগীরথী এক্সপিডিশনে (২১ হাজার ৬৩০ ফুট) যাওয়া। পাশাপাশি সরকারি চাকরির প্রস্তুতিও। ২০১৪,তে প্রাথমিক শিক্ষিকার চাকরি। ২০১৫, মাউন্ট তিচেকাংয়ের এক্সপেএডিশন সম্পূর্ণ করেন, যার উচ্চতা ৬ হাজার দশ মিটার। মাঝে ২০১৮ আগস্ট পর্যন্ত আর্থিক পরিস্থিতির জন্য কোনও এক্সপেডিশনে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। এই সময়টায় চলেছে এভারেস্ট চড়ার মানসিক প্রস্তুতি এবং অর্থ সংগ্রহ করা। এরপর থেকে সে আর ফিরে তাকায়নি।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!