অভিষেকের পথ প্রশস্ত তৃণমূলে!
নিউজ ডেস্ক::অভিষেকের পথ প্রশস্ত হল তৃণমূলে।
দলের ‘নম্বর টু’ পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে অভিষেককে আরও দায়িত্বশীল মনে হচ্ছে। বেশ কতকগুলি ধাপ পেরিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূলে অভিষেক আদতে হয়ে উঠেছেন ‘নম্বর টু’। এখন প্রশ্ন মমতাই তাঁকে জায়গা দিচ্ছেন, নাকি অভিষেক জায়গা করে নিচ্ছেন মমতাকে সরিয়ে?
এবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২১-এর ভোটে নেতৃত্ব দিয়েছেন। অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন প্রধান মুখ। কিন্তু অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন, অন্য কোনও নেতাকে সে অর্থে দেখা যায়নি। মমতাকে বাদ দিলে অভিযেক একটা নিজস্ব ঘরানা তৈরি করেছেন প্রচারে। যার ফলে দেখা গিয়েছে অভিষেককেও আলাদা করে নিশানা করেছেন মোদী-শাহরা। ফলে অভিষেকের গুরুত্ব অনেকাংশেই বেড়েছে।
এরপর ২০২১-এ বিরাট সাফল্য এসেছে তৃণমূলে। ২০১৯-এর ধাক্কা ও বিজেপির থাবা সামলে তৃণমূল ২০০-র উপরে আসন পেয়েছে। এই কৃতিত্ব মমতার একা নয়, অভিষেকও এই সাফল্যের অন্যতম কারিগর। তাই নির্বাচনের পরেই দেখা গিয়েছে অভিষেক বন্যোষ পাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। তিনি দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েই ভিনরাজ্যে তৃণমূলের বিস্তার লাভের চেষ্টায় ব্রতী হয়েছেন।
এখন তাঁকে দেখা যাচ্ছে রাজ্যের নানা সমস্যায় নিজেকে সামনের সারিতে রাখতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আড়ালে রেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সমস্ত সমস্যার মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা নিচ্ছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতারের পর যাবতীয় ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি। দলের অবস্থান ঠিক করার ভার তাঁর উপরই দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল ও সরকারের সর্বেসর্বা। কিন্তু অভিষেক যেভাবে শুক্রবার এসএলএসটি প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন, তাঁদের সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এলেন, শুধু প্রতিশ্রুতি না দিয়ে তাঁদের চাকরির ব্যবস্থার কথা বললেন, তাতে বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারেরও প্রতিনিধিত্ব করছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা ছাড়া অভিষেক তা করতে পারতেন না।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চিরকালই আড়ালে থেকেছেন এ ব্যাপারে। একটা সময় মুকুল রায় দলের সমস্ত সমস্যা মেটানোর দায়ভার নিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘূণাক্ষরেও সেদিকে ফিরে তাকাতে হয়নি। যত গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কোন্দল সব কিছুব অবহেলায় মিটিয়েছেন মুকুল রায়। মুকুল রায় বিজেপিতে চলে যাওয়ার পর কিছুদিন সমস্যা প্রকট হয়েছিল। তারপর সেই দায়িত্ব আস্তে আস্তে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিষেক।
এই পরিস্থিতিতে দেখা গিয়েছে মমতাপন্থী পুরনো নেতারা দলে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছেন। এবং গুরুত্ব হারাতে বসেছেন। তৃণমূলে অভিষেকের নেতৃত্বে একটা নতুন টিম তৈরি হচ্ছে। তাঁরাই দলকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝতে পারছেন এবার নতুনদের জায়গা করে দেওয়া সময় এসেছে।
দিদি একা হয়ে পড়ছেন ভাবা ভুল। এক এক করে পুরনো দিনের সঙ্গীরা তাঁর পাশ থেকে সরে গেলেও নতুনরা তাঁকে মান্যতা দিয়েই দলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই মুকুল রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা না থাকলেও এখন অভিষেকে যে তিনি ভরসা করতে পারেন, তা পরতে পরতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আগামীর নেতা।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে পড়েছে, একের পর এক প্রবীণ নেতৃত্বের অপসারণে তৃণমূলে কি শুরু হতে চলেছে নতুন অধ্যায়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল ক্রমে ঝুঁকে পড়ছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দিকে। তৃণমূলে আসতে চলেছে বিরাট পরিবর্তন। যে পরিবর্তনের ঢেউয়ে মমতার তৃণমূল হয়ে উঠতে পারে নতুন দল। আবার আশার সঙ্গে থেকে যাচ্ছে আশঙ্কাও।
তৃণমূলে এই বিরাট পরিবর্তনের আবহে বাংলায় বিরোধী দলগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আড়ালে রেখে তৃণমূলে অভিষেকের উত্থানের পথ ধরে বাংলায় কোন বিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, সেদিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল। বিজেপি ফের ঘুরে দাঁড়ায় নাকি, সিপিএম ফিরে আসতে পারে, তা বলবে ভবিষ্যৎ। মমতা আড়ালে চলে গেলে কংগ্রেসের পুনর্জন্ম হয় কি না, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।