প্রধানমন্ত্রী-রাজ্যপালকে চিঠি বিধায়কের
নিউজ ডেস্ক ::মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের পাঁচটি জেলাকে ভেঙে নতুন সাতটি জেলা করার কথা ঘোষণা করেছেন।
২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই তা নিয়ে প্রতিবাদে গর্জে উঠল মুর্শিদাবাদ। কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর পর গর্জে উঠলেন বিজেপির বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে চিঠি লিখে অবিভক্ত মুর্শিদাবাদকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার দাবি তুললেন।
বিজেপির বিধায়ক বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলাকে বিভক্ত করে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। তার প্রতিবাদে তিনি চিঠি লেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও রাজ্যপাল লা গণেশনকে। তাঁর দাবি, অবিভক্ত মুর্শিদাবাদ নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক। অবিভক্ত বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। এখন সেই জেলাকে ভেঙে তিন টুকরো করে দুটি অংশ থেকে মুর্শিদাবাদ নাম মুছে ফেলা হচ্ছে।
মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠিতে লেখেন- মুর্শিদাবাদের একটা ইতিহাস রয়েছে। মুর্শিদকুলি খাঁয়ের নামে এই জেলার নামকরণের পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। সেই ইতিহাস ভুলিয়ে দেওয়ার খেলা শুরু করেছে রাজ্য সরকার। মুর্শিদাবদের ঐতিহ্য ও ইতিহাস যাতে অটুট থাকে, তার জন্যই তিনি এই চিঠি লিখছেন।
সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর জেলা ভাগের কথা ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই নাম নিয়ে শুরু হয় চর্চা। মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভেঙে তিনটি জেলা করার কথা ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও কান্দি হবে নতুন তিন জেলার নাম। কিন্তু মুর্শিদাবাদ নাম বাদ দিয়ে নতুন জেলার নামকরণ হলে আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।
অভিযোগ, জেলাভাগ করে মুর্শিদাবাদের নাম মুছে দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমে এই মুর্শিদাবাদকে তিন ভাগে ভেঙে নাম পরিবর্তন নিয়ে গর্জে ওঠেন বহরমপুরের সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। তারপর মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ নিজের সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘মাননীয়া যদি মুর্শিদাবাদ জেলা ভেঙে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস ভুলিয়ে দিতে চান,তবে আমি ভারত সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। অবিভক্ত মু্র্শিদাবাদ জেলাকে তারা যেন তাদের অধীনে নিয়ে ‘মুর্শিদাবাদ’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করে। এবং আমাদের অবিভক্ত বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী মুর্শিদাবাদের হৃত গৌরব ফিরিয়ে দেয়।’
এই ইস্যুতে এর আগে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ইতিহাস থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার নাম মুছে দিলে মানুষ ক্ষমতা করবে না। ইতিহাসের সঙ্গে জুড়ে থাকা জেলার নাম পরিবর্তন কিছুতেই মেনে নেবে না কংগ্রেস। আমার বিশ্বাস বাংলার মানুষও এই নাম পরিবর্তন মেনে নেবে না। যাঁরা বাংলার ইতিহাসে জুড়ে থাকা জেলাকে ভাঙছে, তাঁদের ক্ষমা করবে না মানুষও। মমতার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাজুড়ে আন্দোলনে নামবে কংগ্রেস।
অধীর চৌধুরী সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, মুর্শিদাবাদ জেলাকে ভেঙে বাংলার ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন দিদিমণি। তা মুর্শিদাবাদ তথা বাংলার মানুষ মেনে নেবে না। জেলার ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে মুছে দেওয়া যায় না এভাবে। জেলা ভাগ করলেও জেলার নামের সঙ্গে জুড়ে থাকা পরিচয় বদলে দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, মুর্শিদাবাদ নামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জেলার পরিচয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই জেলাকে ভেঙে তিন টুকরো করতে চাইছেন। বহরমপুর ও কান্দি আলাদা জেলা হলে সেই নামের সঙ্গে আর মুর্শিদাবাদ থাকবে না। ওই ভূখণ্ড থেকে মুর্শিদাবাদ নামটাই মুছে যাবে।