মল্লিকবাড়ির পুজোয় বাড়ির মেয়ে কোয়েল
নিউজ ডেস্ক::হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন, আর তারপরই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজো। বছরভর ধরে শুধু এই দিনগুলোর জন্যে যেন অপেক্ষা। তিলোত্তমা কলকাতার দুর্গাপুজো মানেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সার্বজীনন ক্লাবগুলির মণ্ডপ কিংবা প্রতিমার চমক। নিত্য নতুন থিমে ঝাঁ চকচকে মণ্ডপ, বিশাল বিশাল প্রতিমা রীতিমতো ভিড় কেড়ে নেয়। অন্যদিকে সাবেকি সাজে সেজে ওঠে বনেদি বাড়ির পুজোগুলির অন্য আকর্ষণ। একদিকে যেমন বারোয়ারি পুজোর চোখ ধাঁধান মণ্ডপ ও প্রতিমা মন কেড়ে নেয়, তেমনই সাবেকি সাজে সেজে ওঠা বনেদি বাড়ির ছিমছাম পুজো গুলোও যেন বড্ড আন্তরিক। ইতিহাসের গন্ধমাখা পুজোগুলিও মহানগরীর পুজোয় আলাদা মাত্রা এনে দেয়।
বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে কলকাতার মল্লিক বাড়ির পুজো কিন্তু বেশ নামকরা। এই বছরে ৯৮-এ পা দেবে মল্লিকবাড়ির পুজো। করোনার কোপে গত ২ বছর পুজোয় তেমন জাঁকজমক ছিল না। শোনা যায় নবাব হুসেন শাহর আমলে বর্ধমানের শ্রীখণ্ড গ্রামে মল্লিকদের পূর্বপুরুষ সুরথ মল্লিক প্রথম শুরু করেছিলেন এই পুজো। পরে মল্লিকরা শ্রীখণ্ড থেকে চলে যান হুগলির গুপ্তিপাড়ায়। সেখান থেকে ফের কলকাতায়। মল্লিকবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের দাবি, তাঁদের পুজোর বয়স প্রায় ৬০০ বছর।
তবে ভবানীপুরের বাড়িতে প্রথমে দুর্গা নয়, বরং তাঁরই অপররূপ অন্নপূর্ণারই আরাধনা শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে রাধামাধব মল্লিকের ছোট ছেলে সুরেন্দ্রমাধব মল্লিক এবং অন্যান্য ভাইদের উদ্যোগে শুরু হয় দুর্গাপুজো।
জন্মাষ্টমীর পরের দিন কাঠামো পুজো শুরু হয় ভবানীপুরে মল্লিকবাড়ির ঠাকুর দালানে। বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর নারায়ণের পুজোর সঙ্গে মহালয়া পরবর্তী প্রতিপদ থেকে চণ্ডীঘরে শুরু হয় চণ্ডীপুজো। ডাকের সাজে দেবীকে সাজিয়ে তোলা হলেও দেবীর নাকের নথ ও গলার হার কিন্তু সোনার।
পুজোর কটা দিন ভবানীপুরে বাড়িতেই থাকেন টলি অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক। তারকা খচিত তকমা ছেড়ে তখন তিনি আর পাঁচটা বাড়ির মেয়ের মতোই পুজোর জোগাড়ে ব্যস্ত থাকেন। বাড়ির পুজো নিয়ে বলতে গিয়ে তারকা অভিনেত্রী বলেছেন, “পুজো মানেই বাড়ির দালানে বসে গোটা মল্লিক পরিবারের আড্ডা।” আত্মীয় অনাত্মীয়রা সবাই ভিড় জমান মল্লিকবাড়ির পুজোয়।
মল্লিকবাড়িতে বৈষ্ণবমতে চলে পুজোর উপাচার। সপ্তমীতে কলাবউ স্নান , অষ্টমীতে কুমারী পুজো, অথবা নবমীতে হোম। শোনা যায়, বর্ধমানেও বৈষ্ণব মতেই চলত পুজো। এখানে কোনও পশুবলির প্রচলন নেই। তবে কুমারী পুজো বড় করে পালন করা হয়। পুজোয় অন্নভোগের প্রচলন নেই,পরিবর্তে চাল, ডাল, বিভিন্ন ফল, মিষ্টি এবং লুচি দেওয়া হয় নৈবেদ্য ও ভোগ হিসেবে। আমিষ খাবার ঢোকে না বাড়িতে তবে দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পরে জমিয়ে আমিষ রান্না হয়। প্রতিমা বিসর্জন হয় আদি গঙ্গায়।