প্রকৃতির উপর মানুষের দখলদারি ও খবরদারির কারণেই বাড়ছে হড়পা বাণ – অভিমত পরিবেশবিদদের

0 0
Read Time:4 Minute, 12 Second

নিউজ ডেস্ক::প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচার যত বাড়বে,প্রকৃতি ততই প্রতিশোধ নেবে।বহু বছর আগে ‘মুক্তধারা’ নাটকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন।
এখনো সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া বেশ কয়েকটা হড়পা বাণ নিয়ে একই অভিমত পরিবেশ বিদদের।
হড়পা বান একেবারে স্বাভাবিক, প্রাকৃতিক একটা ঘটনা। পাহাড়ের মাথায় প্রবল বৃষ্টি হলে পাহাড়ের কোল বেয়ে হঠাত্‍ই বাণ নামে। মেঘভাঙা বৃষ্টি হলে ভয়াবহ হয় বাণের সেই রূপ। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মেঘভাঙা বৃষ্টির মতো চরম ঘটনাও বাড়ছে। তার সঙ্গেই বাড়ছে হড়পা বানের সংখ্যা। আর লোভী মানুষের কাজকর্মে সেই বাণ আরও ভয়াল রূপ ধারণ করছে। ২০১৩ সালের কেদারনাথ থেকে ২০২১ সালের চামোলি, এ বছরের জুলাইয়ের অমরনাথ থেকে অক্টোবরের মালবাজার—সব বিপর্যয়ই যেন একসুতোয় গাঁথা। সহজ কথায় বললে, সবই ডেকে আনা সর্বনাশ।
২০১৩ সালের জুনে ‘হিমালয়ান সুনামি’র সাক্ষী হয়েছিল উত্তরাখণ্ড। মৃত্যু হয় ৬,০৫৪ জনের। এখনও নিখোঁজের তালিকায় ৩,৩২২ জন। মহা-বিপর্যয়ের নেপথ্যে নিম্নচাপ-পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জোড়া ফলায় একটানা প্রবল বৃষ্টি। তার পর ফেটে যায় চোরাবারি তাল বা গান্ধী সরোবরের পাঁচিল। এর পরই হড়পা বান। মহাপ্রলয় নামে কেদারনাথে। ময়নাতদন্তে উঠে আসে: কেদারনাথে মন্দির-বাণিজ্যের ঠেলায় বেদখল হয়ে গিয়েছিল নদী। মন্দাকিনীর বুকে এমনই মেদ জমেছিল, ঠাঁই পায়নি হড়পা বাণের প্রবল জল।ফলে দুপার ভেঙে এগিয়ে গেছে ওই বিপুল জলরাশি।
আবার উত্তরাখণ্ডে বিপর্যয়। ধসের ফলে হিমবাহের বড় টুকরো ভেঙে হড়পা বাণ নামে ঋষিগঙ্গা নদীতে। জলের ঠেলায় ভেঙে যায় ঋষিগঙ্গার উপর তৈরি জলাধারও। দ্বিগুণ রোষে নেমে আসে নদী। শেষমেশ চামোলিতে মৃতের তালিকা পৌঁছয় তিরাশি (৮৩)-তে। এখানে মানুষের দোষ কোথায় জানেন? কেন্দ্রীয় সমীক্ষাতেই উত্তরাখণ্ডের ২৩টি জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প বাতিল করতে বলা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই প্রকল্পগুলির জন্য ভাগীরথী, অলকানন্দার স্বাভাবিক ছন্দে বড়সড় ক্ষতি হচ্ছে। বলা হয়েছিল, ২,৫০০ মিটারের উপরে জলবিদ্যুত্‍ কেন্দ্র গড়া যাবে না। ২টি প্রকল্পের মধ্যে দূরত্ব ১ কিলোমিটারের বেশি করতে হবে। সমীক্ষাকে পাত্তা না দিয়ে বাস্তবে কী হয়েছিল? ঋষিগঙ্গার উপরই ৪টি জলবিদ্যুত্‍ প্রকল্প। ধৌলিগঙ্গার উপর ৪টি প্রকল্প, ২টি আবার ২৫০০ মিটারেরও উপরে। উত্তরাখণ্ডে ৮৯টি প্রকল্প, আরও ৩৫০ বাঁধের পরিকল্পনা। খোদার উপর খোদকারির বহরটা বোঝা যাচ্ছে? কেন হড়পা বানের বিপর্যয় বাড়বে না?
তাই এখনো সময় আছে।পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন,নদী সংক্রান্ত কোনো পরিকল্পনা রাজনীতিকরা নয়,সিদ্ধান্ত নিতে হবে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সাথে কথা বলে।সেই প্রসঙ্গেই বলা হয়,মাল নদীতে জল কম থাকায় জল বৃদ্ধির জন্য আলাদা খাল কাটাই প্রকৃতির গতিপথকে পরিবর্তন করার চেষ্টা।ফলে এই বিপুল বিপর্যয়।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!