ধর্মকথা – সতীপীঠ(২য় পর্ব)
নিউজ ডেস্ক::৫১ সতীপীঠের ১৪ টি অবস্থিত পশ্চিম বঙ্গে
ভারতীয় পুরাণমতে ভারত,পাকিস্থান,বাংলাদেশ,শ্রীলঙ্কা ও মানসে মোট ৫১ টি সতীপীঠ আছে।প্রথম সংখ্যায় সতীপীঠের পৌরাণিক ব্যাখ্যা আমরা আলোচনা করেছি।তাই এই পর্বে পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত ১৪টি সতীপীঠের অবস্থান ও দেবী কোন নামে পূজিত হয় তা আলোচনা করবো।
১) সর্বমঙ্গলা সতীপীঠ – এটি বর্ধমান জেলায় অবস্থিত।পুরাণ অনুসারে এখানে দেবীর নাভি পতিত হয়।এখানে দেবী সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিত হয়।
২) বেহুলা সতীপীঠ – এটিও বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে অবস্থিত।এখানে দেবীর ডান হাত পতিত হয়।এখানে সতী বেহুলা নামে পূজিত হয়।
৩) মঙ্গলচন্ডী সতীপীঠ – পুরাণ মতে এটিও বর্ধমান জেলার উজ্জয়নীতে অবস্থিত।এখানে দেবীর ডান কব্জি পতিত হয়।এখানে দেবী মঙ্গলচন্ডীকা নামে পূজিত হয়।
৪) ভ্রামরী সতীপীঠ – এই সতী পীঠটি কিছুটা উত্তরে জলপাইগুড়ি জেলার জল্পেশ মন্দিরের কাছে অবস্থিত।কথিত আছে এখানে দেবীর বামহাত পতিত হয়।দেবীকে এখানে ভ্ৰামরী নামে পুজো করা হয়।
৫) যোগদ্যা শক্তিপীঠ – যোগদ্যাকে শক্তিপীঠ বলা হয়।এটাও বর্ধমান জেলার ক্ষীরগ্রামে অবস্থিত।পুরাণ মতে এখানে ডানপায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল পতিত হয়।এখানে অধিষ্ঠাত্রী দেবী যোগদ্যা।
৬) কালীঘাটপীঠ – এটি দক্ষিণ কোলকাতার কালীঘাটে অবস্থিত।এখানে দেবীর ডান পায়ের আঙ্গুল পড়ে বলে পুরাণ অভিমত দেয়।এখানে দেবী কালিকা রূপে পূজিত হয়।
৭)কিরীটেশ্বরী সতীপীঠ – এই সতীপীঠ মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটকোন গ্রামে অবস্থিত।এখানে সতীর মাথার মুকুট পতিত হয় বলে কথিত আছে।এখানে দেবী বিমলা রূপে পূজিত হয়।
৮) বর্গভীমা সতীপীঠ – এই সতীপীঠ মেদিনীপুর জেলার তমলুকে অবস্থিত।কথিত আছে এখানে সতীর এক পায়ের নুপুর পতিত হয়।এখানে দেবী কপালিনী(ভীমরূপা) রূপে পূজিত হয়।
৯) রত্নাবলী সতীপীঠ – এটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায় অবস্থিত।শোনাযায় এখানে দেবীর ডানকাঁধ পড়ে।এখানে দেবী সতীকে কুমারী রূপে পুজো করা হয়।
এরপরেই আমরা আলোচনা করবো বীরভূম জেলায় সতী পীঠ নিয়ে।একমাত্র বীরভূম জেলায় মোট ৫টি সতীপীঠ আছে।তাই বীরভূম জেলাকে খুব পবিত্র বলে গণ্য করা হয়।
১০) কঙ্খালীতলা সতীপীঠ –
পুরাণে উল্লিখিত ৫১ সতীপীঠের অন্যতম কঙ্কালীতলা। বীরভূমের বোলপুরে অদূরে অবস্থিত। পুরাণ বলছে, দক্ষযজ্ঞের পর দেবী পার্বতীর ‘কঙ্খাল’ এই স্থানে পড়েছিল। তাই এই এলাকার নাম ‘কঙ্কালীতলা’। এখানে দেবী দেবগর্ভা হিসেবে পূজিত।প্রতি কালী পুজোয় অমাবস্যার রাতে এই মন্দিরে তান্ত্রিক রীতি মেনে শান্তি যজ্ঞ হয়ে থাকে।
১১) ললাটেশ্বরী – বীরভূমের নলহাটী শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত। দক্ষযজ্ঞের পর দেবী পার্বতীর শ্বাসনালী সহ কণ্ঠনালী এখানে পড়েছিল বলে প্রচারিত। বলা হয় কামদেব স্বপ্নাদেশ পেয়ে সতীর সেই কণ্ঠনালী উদ্ধার করেন। ব্রাহ্মণী নদীর তীরে ললাট পাহাড়ের নিচে দেবীর বেদী প্রতিষ্ঠিত হয়। নাম হয় দেবী নলাটেশ্বরী। পরে প্রতিষ্ঠিত হয় মন্দির। দেবী এখানে কালিকা রূপে পূজিত হন।
১২) নন্দীকেশরী –
বীরভূমের সাঁইথিয়া শহরের মধ্যভাগে অবস্থিত। নন্দীকেশ্বরী মন্দিরকে ঘিরে মিথ কিছু কম নেই। পুরাণে কথিত দেবী পার্বতীর গলার হার নাকি এই এলাকায় পড়েছিল। দেবী এখানে নন্দিনী হিসেবে পূজিত।
১৩) বক্রেশ্বর – বীরভূম-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অবস্থিত সতীপীঠ বক্রেশ্বর। বক্রেশ্বর সম্পর্কে কথিত আছে, দক্ষযজ্ঞের পর মহাদেব যখন দেবী পার্বতীর মৃতদেহ নিয়ে ব্রহ্মাণ্ডে প্রলয়-নাচন শুরু করেছিলেন, তখন ভগবান বিষ্ণুর চক্রে খণ্ডিত সতীর ভ্রূণের মধ্যবর্তী অংশ বা ‘মন’ বক্রেশ্বরে পড়েছিল। সেই মিথকে কেন্দ্র করেই এখানে তৈরি হয়েছে মন্দির। এখানে পূজিত দেবী নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকলেও এখানে দেবী দুর্গা রূপেই পূজিত হন।
১৪) ফুললরা – সতীপীঠ ফুল্লরা বীরভূমের লাভপুরে অবস্থিত। পুরাণ বলছে ফুল্লরায় দেবীর ঠোঁটের নিচের অংশ পড়েছিল। দেবী এখানে ফুল্লরা নামে পূজিত হন।
পরবর্তী সংখ্যায় উত্তর ভারতের সতীপীঠ –