ভারতে করোনার অশনি সংকেত!
নিউজ ডেস্ক::দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে এই মুহূর্তে ভারতে কোভিডেওর সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৬ মার্চের মধ্যে পাওয়া রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে। যা নিয়ে ভারত.কে সতর্ক করেছে হু।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ২৭ হাজারের বেশি নতুন আক্রান্ত রেকর্ড করা হয়েছে। আগের ২৮ দিনের তুলনায় ১৫২ শতাংশ বেশি। ভারতের পরেই রয়েছেন মালদ্বীপ, সেখানে সংক্রমণ বৃদ্ধি ১২৯ শতাংশ। তারপরে রয়েছে নেপাল, সেখানে সংক্রমণ বৃদ্ধি ৮৯ শতাংশ। ভারতে নতুন করে মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে ৬২ জনের। সেক্ষেত্রে প্রতি ১ লক্ষে মৃত্যু বৃদ্ধি হয়েছে ১১৪ শতাংশের মতো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতে বর্তমান সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে ওমিক্রনের XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্ট। হু-র তরপে বলা হয়েছে, ২২ টি দেশ থেকে ওমিক্রনের XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্টের প্রায় ৮০০ জিনোম সিকোয়েন্সিং করা হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই ভারতের। সেখানে দেখা গিয়েছে, XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্ট অন্যগুলির থেকে এগিয়ে রয়েছে।
হু-র তরফে বলা হয়েছে, XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্টের সঙ্গে XBB.1.5 ভ্যারিয়েন্ট-এর অনেকাংশে মিল রয়েছে। XBB.1.16 ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিনে অতিরিক্ত মিউটেশন হয়েছে। যা সংক্রমণ বৃদ্ধিতে কার্যকরী। অর্থাৎ আগেরটির থেকে দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে এটি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই নতুন রূপের লক্ষণগুলি বেশিরভাগ লো গ্রেডের ফ্লুর মতো। সাধারণভাবে আপার ও লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে। সর্দি, গলা ব্যথা, আস্তে আস্তে জ্বর বৃদ্ধি পাওয়া, যা দুদিনের মতো থাকে। সেই সময় নাকের গন্ধও চলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে। এইলব লক্ষণ দেখা দিলে কোভিড পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
লোয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্টে সংক্রমণের ক্ষেত্রে ব্রঙ্কাইটিস এবং কাশির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তির হার কম, পরিস্থিতি বাড়িতেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
দেশের নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যে কোভিডের সংক্রমণ বেশি বেড়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের প্রকাশিত তথ্য অনুসারে মহারাষ্ট্রে ৩ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহে সংক্রমণ ০.৫৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৪ মার্চের সপ্তাহে হয়েছে ৪.৫৮ শতাংশ। গুজরাতের ০.০৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ২.১৭ শতাংশ, কেরলে ১.৪৭ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৪.৫১ শতাংশ। কর্নাটকে ১.৬৫ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩.০৫ শতাংশ। দিল্লিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়ে ০.৫৩ শতাংশ থেকে হয়েছে ৪.২৫ শতাংশ। হিমাচল প্রদেশে ১.৯২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.৪৮ শতাংশ। রাজস্থানে ০.১২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৬২ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ০.৪৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২.৪০ শতাংশ।
তবে সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও আশার খবর শোনাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, আগেরবার কোভিডের সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় দেখা গিয়েছে, যাঁরা টিকা নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা অনেকটাই বেশি। বিষয়টি হাইব্রিড ইমিউনিটি বলেও ব্যাখ্যা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এই হাইব্রিড ইমিউনিটিতে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা করেছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কোভিড ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রুখতে মানুই পারেন, বলছেন তাঁরা। বারে বারে হাত ধোয়া, মাস্ক পরা এবং জমায়েত এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।