আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস/মে দিবসের একটি প্রতিবেদন
নিউজ ডেস্ক::আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস আসলে বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। ১মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস বা মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে সেই ১৮৯১ সাল থেকে। যারা নীতিগতভাবে বিশ্বাস করে শ্রমিক-কৃষকই সমাজের পরিবর্তন করতে পারে তাদের উদ্যোগেই ও বিশ্বের কমিউনিষ্ট পার্টির সহযোগিতাতেই মূলত পালিত হওয়া শুরু হয় মে দিবসের অনুষ্ঠান। শ্রমজীবী মানুষের ৮ ঘন্টা কাজের দাবি ও যোগ্য পরিবেশ ও সম্মানের দাবিতে বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় এই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। এখন ভারত ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে আড়ম্বরের সঙ্গে পালিত হয় এই শ্রমিক দিবস। প্রতীটি কলে কারখানায় লাল পতাকা তুলে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস।
ঐতিহাসিক তথ্য জানাচ্ছে,১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নিহত শহিদদের আত্মত্যাগকে মনে রেখে এই দিনটি পালিত হয়। সেদিন দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত করেছিলেন। তাদের সঙ্গে সংঘাত বাধে পুলিশের। তার পর পুলিশের গুলিতে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক নিহত হন। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। এই হল আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সূচনা। ১৮৯১ সালে প্যারিসেই আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। স্বীকৃতি পায় মে দিবস। তারপর ধীরে ধীরে সমস্ত পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে মে দিবসের তাৎপর্য। জয় হয় গণতন্ত্রের।
তবে স্মরণে রাখতে হবে সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী মানুষেরই আড়ম্বরের সঙ্গে পালন করে এই দিনটি। ১৯০৪ সলে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। শুরু সমস্ত বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক মে দিবসের উদযাপন।
আমাদের দেশেও বহু বছর ধরেই এই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালিত হচ্ছে।ভারতে এই আন্তর্জাতিক মে দিবস পালিত হওয়া শুরু করে মূলত দেশের কমিউনিস্টদের উদ্যোগে ১৯২৩ সালে। যদিও তখন ঐ দলের নাম ছিল ‘লেবার পার্টি’। ১৯২৩ সালে লেবার পার্টি অব হিন্দুস্তান ভারতে এই দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। চেন্নাইয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের লাল পতাকা তোলা হয়।
তীব্র শোষণ ও শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ থেকেই উনিশ শতাব্দীর আগে কারখানার শ্রমিকদের দৈনিক ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা করে কাজ করানোর চল ছিল। কিন্তু সেই তুলনায় তাঁদের বেতন ছিল যত সামান্য। যা তাঁদের জীবন ধারণের জন্যে যথাযথ ছিল না। দীর্ঘদিন ধরে এই অতিরিক্ত শ্রমের বিনিময়ে অল্প পারিশ্রমিকে খাটিয়ে নেওয়া মালিক শ্রেণীর এই ভাবধারা ভেঙে চূড়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল মে দিবস। আমেরিকা থেকে ধীরে ধীরে চিন, রাশিয়া, ভিয়েতনাম, কিউবা, বাংলাদেশ, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে মে দিবসের তাৎপর্য ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবি।
আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে বিশ্বের সমস্ত শ্রমিকদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি।