ফুচকা বিক্রেতা থেকে আইপিএলে শতরানকারী
নিউজ ডেস্ক::আইপিএলে কেরিয়ারের প্রথম শতরানটি হাঁকালেন রাজস্থান রয়্যালসের যশস্বী জয়সওয়াল। ১৬টি চার ও ৮টি ছয়ের সাহায্যে ৬২ বলে ১২৪ রান করলেন। এর সুবাদে চলতি আইপিএলে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী হয়ে দখলে নিলেন কমলা টুপি।
বছর ২১-এর যশস্বী আজ জায়গায় কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়েই। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে নাবালক যশস্বীর উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বই আসা। মাথার উপর ছাদ ছিল না। থাকতেন তাঁবুতে। সংসার চালাতে আজাদ ময়দানে পানিপুরি বা ফুচকা বিক্রিও করেছেন।
উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি গ্রামে যশস্বীদের আদি বাড়ি। সেখান থেকে ১১ বছর আগে পরিবারের সঙ্গে আসেন মুম্বইয়ে। তিনবেলার মধ্যে দু-বেলা খাবার খেতেন। বাকিটা সময় কাটাত গ্লুকোজ বিস্কুট খেয়ে। আইপিএল তাঁকে কোটিপতি বানিয়েছে। যশস্বীর স্বপ্নপূরণ হয়েছে। বাবা-মা তাঁর জন্য যা স্বার্থত্যাগ করে কষ্টের জীবন কাটিয়েছেন, এখন তাঁদের স্বস্তির পরিবেশে রাখতে চান।
ভারতের হয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে যশস্বীর কভার ড্রাইভ, আক্রমণাত্মক কাট শট সকলের নজর কেড়েছিল। ৬ ম্যাচে ৪০০ রান করে সর্বাধিক রান সংগ্রহকারী হয়েছিলেন। রাজস্থান রয়্যালস দলে জস বাটলারের পরামর্শে নিজেকে সমৃদ্ধ করেছেন। যশস্বী-বাটলার অন্যতম সেরা ও বিপজ্জনক জুটিতে পরিণত হয়েছে। আজ বাটলার রান না পেলেও জ্বলে উঠল যশস্বীর ব্যাট।
বিজয় হাজারে ট্রফিতে ডাবল সেঞ্চরি রয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ খেলে ফেরার পরই কোভিড পরিস্থিতিতে থমকে গিয়েছিল ক্রিকেট। অনিশ্চয়তায় পড়েন যশস্বীর মতো অনেকে। বাড়িতে দিনগুজরান। বডি ক্লক বদলে যায়। দিনে ঘুমিয়ে রাতে ওঠা। পরিবারের কথায় বাইরে যেতে পারতেন না। অনুশীলনের মাঠ বন্ধ।
২০২০ সালে আইপিএলে খেলতে নামেন। সাত-আট মাস অনুশীলনে না থাকায় ছন্দে পাননি। কাঁধের চোটও ভুগিয়েছিল। সেবার ৩ ম্যাচে ৪০ রান করেন। ২০২১ সালে ১০ ম্যাচে ২৪৯ ও ২০২২ সালে ১০ ম্যাচে ২৫৮ রান করেন যশস্বী। ২০২১ সালে একটি, ২০২২ সালে ২টি অর্ধশতরান করেন। এবার তিনটি অর্ধশতরানের পর এলো শতরান।
২০১৯ সালে রঞ্জি অভিষেক। দ্বিতীয় ম্যাচেই মুম্বইয়ের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম শতরান। আজ রাজস্থানের হয়ে খেললেও ওয়াংখেড়ে তো যশস্বীর হোম গ্রাউন্ড। তাই দুরন্ত শতরান হাঁকিয়ে শেষ ওভারে যখন আউট হয়ে ফিরছেন, ১ হাজারতম আইপিএল ম্যাচ দেখতে আসা সকলেই উঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালেন। সঙ্গকারা পরে দিলেন কমলা টুপি।
যশস্বী বলেন, জুবিন বারুচার তত্ত্বাবধানে ব্যাটিং অনুশীলন করে উপকৃত হয়েছি। স্পেশ্যাল ইনিংস খেললাম। এমন ব্যাটিং চালিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। উইকেটের কথা না ভেবে রান রেট বাড়ানোই লক্ষ্য ছিল। সে কারণেই বাউন্ডারি মারার উপর জোর দিই। উল্লেখ্য, জয়সওয়ালের ১২৪ রানের মধ্যে ১১২ রান এসেছে বাউন্ডারি থেকে।
রোহিত শর্মা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ১১৮ করেন, তার ১০৮ রান এসেছিল বাউন্ডারি থেকে। অর্থাৎ সেই ইনিংসের ৯১.৫৩ শতাংশ এসেছিল চার ও ছয় থেকে। যশস্বীর কীর্তি রইল তার পরেই। আইপিএলেও গড়লেন নয়া নজির। ২০০৮ সালে চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে সনৎ জয়সূর্যর অপরাজিত ১১৪ রানের ১০২ রান এসেছিল বাউন্ডারি থেকে।
জয়সূর্যর সেই কীর্তিকে টপকে আইপিএলে নয়া নজির গড়লেন মুম্বইয়ের তরুণ ব্যাটার। বীরেন্দ্র শেহওয়াগ থেকে টম মুডি, প্রাক্তন ক্রিকেটাররাও মুগ্ধ যশস্বীর দায়িত্বশীল, পরিণত শতরান দেখে। যশস্বীর রানের পর রাজস্থান ইনিংসে সর্বাধিক রান মিস্টার একস্ট্রার। অতিরিক্ত ২৫ রান। কোনও ব্যাটার ২০ রানেও পৌঁছতে পারেননি।