স্মরণে কবিগুরু
Read Time:4 Minute, 13 Second
আনুশ্রী পাল : “আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের ‘পর,
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!
না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।”
৭ মে ১৮৬১ (২৫শে বৈশাখ ১২৬৮), তিলোত্তমা কলকাতার বুকে ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাল্যকালের তিনি কখনো প্রথাগত বিদ্যালয়ের শিক্ষা নেননি, গৃহ শিক্ষক রেখেই বাড়িতেই শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয় - এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা
। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান এবং ১৮৮৩ সালে ২২ বছর বয়সে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন অগ্রণী বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়।
নোবেলজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবর্ষের জাতীয় সংগীত "জনগণমন অধিনায়ক জয় হে" শুধু নয় তিনি বাংলাদেশ জাতীয় সংগীত আমার "সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি" এবং শ্রীলংকা জাতীয় সংগীত"নমো নমো শ্রীলংকা মাতা" রচনা করেন। যদিও শ্রীলংকার জাতীয় সংগীত কার লেখা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি এশীয়দের মধ্যে সাহিত্যে প্রথম নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই তিনি বসবাস শুরু করেন।১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন, কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
জীবনের শেষ চারটে বছর রবীন্দ্রনাথ বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে কাটিয়েছিলেন, এই সময় দুবার অত্যন্ত অসুস্থতার কারণে শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।