সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে স্কুল শিক্ষিকার চাকরি হারালেন সাংবাদিকের স্ত্রী
নিউজ ডেস্ক ::
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নাম প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন। নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় চাকরি হারিয়েছেন ৯০৭ জন।
সেই তালিকায় বিভিন্ন জেলার একাধিক তৃণমূল নেতার নাম রয়েছে। যাঁদের কেউ জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতিতে তৃণমূলের টিকিটে জয়ী, কেউ আবার এলাকায় তৃণমূল নেতা হিসেবেই পরিচিত। তবে শুধু নেতারাই নন, নাম রয়েছে সাংবাদিকের স্ত্রী-র।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বড় করে দেখানো হচ্ছে তৃণমূল নেতাদের চাকরি হারানোর বিষয়টি। যদিও সব কিছু জেনেও বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নীরব সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি হারানোর বিষয়টি ধামাচাপা দিতে। এই পরিস্থিতি দেখে শাসক হোক, বা বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের দাবি, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে কি সংবাদমাধ্যম কেন সাংবাদিকদের কুকীর্তি ধামাচাপা দিচ্ছে? এটা কি নিরপেক্ষতা?
আমরা পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি সাংবাদিকের স্ত্রী-র সঙ্গে, যাঁর চাকরি গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। ২০১৬ সালে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির জন্য সহকারী শিক্ষক পদে নিযুক্তদের মধ্যে যাঁরা অবৈধভাবে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের যে তালিকা ২৬ জুলাই প্রকাশ করা হয়েছে তাতে নাম রয়েছে সংগীতা হাজরার। তালিকার ৬৩৩ নম্বরে রয়েছে সেই নাম।
সংগীতা হাজরার রোল নম্বর ছিল ১২২২১৬১৬০০১৩৯৬। তিনি গলসি সারদা বিদ্যাপীঠ স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ তথা প্রভাবশালী তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাকে ধরেই সেই চাকরির বন্দোবস্ত হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। এমনকী ওই নেতা তালিকা প্রকাশের আগেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি হচ্ছে বলে।
তালিকা প্রকাশের পর দেখা গিয়েছিল নিউজ ১৮ বাংলায় পূর্ব বর্ধমানের সাংবাদিক হিসেবে কর্মরত শরদিন্দু ঘোষের স্ত্রী চাকরি পেয়েছেন। নেতার কথা মিলে যাওয়ায় সাংবাদিকরাও অবাকই হয়েছিলেন। পূর্ব বর্ধমানের সাংবাদিক মহল থেকে রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হয়েছিল তখন। এখন ওই সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি যাওয়াতেও শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
যে তৃণমূল নেতার মাধ্যমে সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি হয়েছিল এবং ওই সাংবাদিক আরও কয়েকজনকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ, সেই তৃণমূল নেতা প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। এমনকী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী-র শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে ওই তৃণমূল নেতা বর্ধমান থেকে মিষ্টি সরবরাহ করেছিলেন বলে সূত্রের খবর। পার্থ এখন জেলবন্দি।
এই অবস্থায় সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি যেতেই তদন্তকারীদের নজরে ওই তৃণমূল নেতা। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, এই জেলা থেকে আরও কাউকে অবৈধভাবে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হয়েছে কিনা। খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যাচ্ছে, সাংবাদিকের স্ত্রী সংগীতা যে বিএড কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন সেখানেও তাঁর হাজিরার হার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। এরপর গলসির স্কুলেই ইতিহাসের সাক্ষী পান।
পূর্ব বর্ধমানের সাংবাদিকের স্ত্রী হিসেবে অবৈধভাবে চাকরি পেয়ে ইতিহাসের শিক্ষিকা ইতিহাসও গড়লেন বলে কটাক্ষ করছেন অনেকেই। এই ৯০৭ জনের তালিকায় থাকা অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সংগীতাও হাঁটতেই পারেন। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের গায়ে যে কলঙ্কের দায় লাগল সেই দাগ মুছবে কি? সাংবাদিকের স্ত্রী হিসেবে অনেক হেভিওয়েটের সঙ্গে সংগীতার ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সাংবাদিকের স্ত্রী-র অবৈধভাবে পাওয়া চাকরি যেতেই খুশি সংবাদমাধ্যমের অনেকেই। এমনকী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও। যে নিউজ ১৮ বাংলায় ওই সাংবাদিক কর্মরত সম্প্রতি ওই চ্যানেলকে পিসির চ্যানেল বলে কটাক্ষ করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ওই চ্যানেল না দেখার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই চ্যানেলের সাংবাদিকের স্ত্রী-র চাকরি যেতেই তিনি অস্বস্তিতে ফেললেন সেই চ্যানেলটিকেও। প্রশ্ন উঠতেই পারে নিরপেক্ষতা নিয়ে। তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও তুলছেন অনেকে।