স্বাধীনতা আন্দোলনে স্বামী বিবেকানন্দের ভূমিকা
নিউজ ডেস্কঃ একথা ঠিক স্বামী বিবেকানন্দের প্রধান পরিচয় তিনি একজন ধর্মপ্রবক্তা ও সমাজ সংস্কারক। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁর প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা ছিল না। কিন্তু নেতাজির মতো বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীর প্রেরণা ছিলেন স্বামীজি। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা পরোক্ষ। স্বামীজি ছিলেন যুবসমাজের আদর্শ। তিনি ভারতের স্বাধীনতা এবং নতুন ভারত গঠনের ক্ষেত্রে যুবশক্তির ওপরই ভরসা করতেন। তিনি যুবসমাজকে লৌহ কঠিন পেশি, ইস্পাত কঠিন চরিত্র ও বজ্ৰদীপ্ত মনের অধিকারী হওয়ার আহ্বান জানান। তার বিশ্বাস ছিল একশত খাঁটি আদর্শবাদী যুবক মিলিত হলে ভারতের স্বাধীনতা অবশ্যম্ভাবী। স্বামীজি এমন এক ভারতের স্বপ্ন দেখতেন যেখানে থাকবে না ক্ষুধার জন্য আর্তনাদ, স্বার্থের জন্য শােষণ, লােভের জন্য নিপীড়ন, গরিমার জন্য অবহেলা। নবভারতের রূপকার স্বামীজি চেয়েছিলেন নতুন ভারত গড়ে উঠবে প্রকৃত মানুষদের নিয়ে। তিনি বলেন—“নতুন ভারত বেরুক, বেরুক লাঙল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে-মাল্লা-মুচি-মেথরের ঝুপড়ির মধ্যে হতে, বেরুক মুদির দোকান থেকে, ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে, বেরুক কারখানা থেকে, হাট থেকে, বাজার থেকে, বেরুক জঙ্গল পাহাড় পর্বত থেকে।” তাঁর এই বাণী আসলে স্বাধীন ভারত গড়ার বাণী। ব্রিটিশ শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বাণী।
স্বামীজি ছিলেন একজন দার্শনিক। তাঁর সমস্ত কথায় তাঁর জীবন দর্শন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্বামীজির জাতীয়তাবাদে মাতৃভূমির শৃঙ্কলমােচনের পাশাপাশি মানবমুক্তির কথা বলা হয়। স্বামীজি বলেছিলেন—”জগতের ইতিহাস পর্যালােচনা কর, যেখানেই কোনাে সুমহান আদর্শের সন্ধান মিলবে দেখিতে পাইবে উহার জন্ম ভারতবর্ষে।” এভাবেই ভারতবর্ষের প্রকৃত সত্যকে উনি তুলে ধরেছেন। আর সেই সত্যের প্রকাশ স্বাধীনতা ছাড়া যে সম্ভব নয়,তা আর বলার অবকাশ থাকে না। স্বামীজির বাণীগুলিতে উদ্দীপ্ত হয়েও উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুবসম্প্রদায় স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্বাধীনতার দাবিতে উত্তাল রক্তে রাঙা দিনগুলিতে স্বামীজি ছিলেন বিপ্লবীদের আদর্শ। গােপাল হালদারের মতে ‘বাংলাদেশকে যদি কেউ বিপ্লবী মন্ত্রে জাগিয়ে থাকনে, তিনি বিবেকানন্দ।’ বিবেকানন্দ বলেন—কেবল সাহসী শক্তিমানরাই স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে। তাঁর প্রতিটা লেখায় স্বাধীন ভারত গড়ার মর্মবাণী রয়ে গেছে। এই প্রসঙ্গেই স্মরণীয়, গান্ধীজি বলেছিলেন, স্বামীজির রচনাবলী পাঠ করে ভারতের প্রতি তাঁর ভালোবাসা শতগুন বৃদ্ধি পেয়েছিল।