স্বাধীনতা উত্তর ভারতে নারীর ক্ষমতায়ন – একটি পূর্ণাঙ্গ ছবি
নিউজ ডেস্কঃ ভারত স্বাধীন হওয়ার কিছু বছর আগেই স্বামী বিবেকানন্দ বলেছেন, ‘যে দেশে নারী-সমাজের বিকাশ হবে না, সেই দেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না।’ আর ক্ষোভের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সেই কথা আমাদের সকলের স্মরণে আছে – ”নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার/ কেন নাহি দিবে অধিকার!/হে বিধাতা?”
কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও আমাদের খেদ থেকেই গেছে। হ্যাঁ, বিকাশ হয়তো অনেকটা হয়েছে কিন্তু তা আশানুরূপ নয়। নারী পুরুষ লিঙ্গসমতার কথা ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনাতেই উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া মৌলিক অধিকার, মৌলিক কর্তব্য ও নির্দেশাত্মক নীতির মধ্যেও বিষয়টি রয়েছে। গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকে আমাদের আইন, উন্নয়নের নীতি, পরিকল্পনা এবং কর্মসূচি বিভিন্ন ক্ষেত্রে মেয়েদর অগ্রগতির অভিমুখে কাজ করেছে।
পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় থেকে (১৯৭৪-১৯৭৮) মেয়েদের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গির একটা বিরাট পরিবর্তন এসেছে। এই পর্বে কল্যাণের চেয়ে নারীর উন্নয়নের প্রশ্নটিতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। ১৯৯০ সালে সংসদীয় আইনের মাধ্যমে জাতীয় মহিলা কমিশন গঠন করা হয় যার উদ্দেশ্য মেয়েদের অধিকার ও আইনি সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। কিন্তু বস্তবে তা কতটা সম্ভব হয়েছে, তা নিয়ে সংশয় আছে। ভারত নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণ ও মেয়েদের অধিকার দানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সনদে সাক্ষর করেছে। এর মধ্যে মুখ্য হল— নারীদের প্রতি বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত ১৯৯৩-এর সনদে (‘দি কনভেনশন অন এলিমিনেশন অফ অল ফর্মস অফ ডিসক্রিমিনেশন এগেনস্ট উইমেন’) অনুমোদন দেওয়া।
হ্যাঁ,আইনগতভাবে ভারত সরকার নারীর ক্ষমতায়নে সচেষ্ট। তাই সংবিধানের ৭৩ এবং ৭৪ নম্বর সংশোধনীর (১৯৯৩) মাধ্যমে মেয়েদের জন্য পঞ্চায়েত, পৌরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনে আসন সংখ্যা সংরক্ষিত করা হয়েছে।
নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নেওয়া ভারতের নীতিগুলি নবম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা এবং অন্যান্য বিষয়ভিত্তিক কর্মসূচির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। কিন্তু তবুও এখনো সমাজের একটা বড়ো অংশ নারীর ক্ষমতায়নে বিপক্ষে।
এটা এক ধরনের সামন্ততান্ত্রিক ঝোঁক। সেই সামন্ততন্ত্রের বীজ সমূলে তুলে ফেলতে না পারলে নারীর সম্পূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। একথা সম্পূর্ণ ঠিক,নারী সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে সরকারের। তৃণমূল স্তরে জোরালো উপস্থিতি রয়েছে এমন সব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক সংযোগ এবং বিভিন্ন নারী আন্দোলন মহিলাদের ক্ষমতায়নের প্রশ্নটিকে ঘিরে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। ফলে গত ১০/১৫ বছরে ভারতীয় সমাজনীতি, রাজনীতি ও অর্থনীতির বিকাশের ক্ষেত্রে নারী একটি বড়ো ভূমিকা নিয়েছে। ভারতীয় পার্লামেন্টরর স্পিকার ছিলেন মীরা কুমারী,এখন ভারতের রাষ্ট্রপতি একজন সংখ্যালঘু মহিলা,পশ্চিমবঙ্গ সহ একাধিক রাজ্য মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পেয়েছেন।
কিন্তু তৃণমূল স্তরে নারীর বিকাশের জন্য আরো বহু লড়াই করতে হবে। কারণ সমাজের কোণায় কোণায় এখনো লিঙ্গবৈষম্য রয়েছে। লিঙ্গ বৈষম্য নানা ভাবে ফুটে ওঠে তা বোঝার সবচেয়ে প্রধান উপায় হল জনগণনা রিপোর্ট অনুযায়ী গত কয়েক দশকে জনসংখ্যায় নারী-পুরুষ অনুপাত কমা। সমাজের তথৈবচ অবস্থা, সামাজিক ক্ষেত্রে ও বাড়িতে মেয়েদের উপর হিংসার ঘটনা তার আরও একটি প্রমাণ। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক— সমস্ত ক্ষেত্রে প্রকৃত ও বিধিসম্মত ভাবে নারীরা যাতে পুরুষদের সঙ্গে সমান মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা ভোগ করেন তার ব্যবস্থা করা। সেই লড়াই এখন হোক ভারতের অন্যতম লড়াই।