রাজ্যের একের পর এক জেলায় বন্যা পরিস্থিতি
নিউজ ডেস্কঃ আবহাওয়া বিশেষ কোনও বদল নেই। নেই বৃষ্টিতে বিরাম। যে কারণে নদীগুলিতে জলস্তর বাড়ছে। অন্যদিকে জলের চাপ কমাতে ব্যারেজ থেকেও জল ছাড়া হচ্ছে। যে কারণে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীর পাশাপাশি মহানন্দা নদীর জল স্তর ক্রমশ বেড়েছে। ইতিমধ্যে বামনগোলা ব্লক, গাজোল ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে। মহানন্দা নদীর জল বাড়ায় নদীর তীরবর্তী এলাকা গুলিতে জল ঢুকে পড়েছে প্লাবিত হয়েছে এলাকাগুলি। ইংরেজবাজার পৌরসভার ১০, ৯,৮ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ড ইতিমধ্যে মহানন্দা নদীর জলে প্লাবিত হয়েছে।
প্রায় এক মাস পার হয়ে গেলেও এখনো মহানন্দার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা জলমগ্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছে ইংরেজবাজার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীনারায়ণ মন্দিরও। জলমগ্ন এলাকার মানুষ রীতিমতো জলের উপর দিয়ে চলাফেরা করছেন।
ইতিমধ্যেই ইংরেজবাজার পুরসভার পক্ষ থেকে প্লাবিত এলাকার জলবন্দী নাগরিকদেরকে অস্থায়ীভাবে বিবেকানন্দ স্কুল ময়দানের পাশে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে অনেককে আবার স্কুলেও রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে কম করে প্রায় ৫০০টি ঘর জলবন্দী অবস্থায় রয়েছে। তবে জেলা আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে যেটা জানা যাচ্ছে আগামী আরও দুই থেকে তিন দিন নিম্নচাপের ফলে জেলায় বৃষ্টিপাত হবে সে ক্ষেত্রেও জল বাড়বে বলে আশঙ্কা।
অন্যদিকে মহানন্দা নদীর জল ফুলে ফেঁপে উঠায় জলবন্দি পুরাতন মালদা পুরসভার ৮,৯,২০ নম্বর ওয়ার্ড। বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড়ের উপদ্রব। এই জলবন্দী অবস্থার মধ্যেও পানীয় জল সঠিক ভাবে মিলছে না।
ইংরেজবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী জানিয়েছেন, মহানন্দা নদীর তীরবর্তী এলাকার বসবাসকারী পুর নাগরিকদেরকে ইতিমধ্যে সরিয়ে নিয়ে অস্থায়ীভাবে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এলাকার বেশ কিছু স্কুলেও তাদের রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। অন্যদিকে ইংলিশবাজার শহরের তিন নম্বর ২৫ নম্বর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও এখন জল রয়েছে। জল বের করার কাজ চলছে, তা দ্রুত বেরিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে ইংলিশবাজার পুরসভাকে খোঁচা দিতে ছাড়েনি বিজেপিও। ইংরেজবাজার পুরসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির কাউন্সিলর অম্লান ভাদুড়ি জানান, মহানন্দা তীরবর্তী যে এলাকা প্রতি বছরের বর্ষার সময় ডুবে যায়, পুরসভার উচিত একটি ফ্লাড সেন্টার করে দেওয়ার। পাশাপাশি প্রশাসন যদি একটি বাঁধের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে এই ওয়ার্ডগুলি মহানন্দা তীরবর্তী এলাকার মানুষ আর প্লাবিত হবে না।
লাগাতার ভারী বৃষ্টি ও দামোদরের ওপর বিভিন্ন জলাধার পাঞ্চেত, মাইথন ও দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ক্রমাগত জল ছাড়ার ফলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দামোদরের সংলগ্ন নিম্নবর্তী এলাকা গুলি। জল ঢুকতে শুরু করেছে দুর্গাপুর নগর নিগমের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন সোনাই চন্ডীপুর এলাকায়। ধাপে ধাপে গ্রামের ভেতর জল ঢোকায় বেশ কিছু নিচু জায়গায় থাকা বাড়িগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
এলাকা পরিদর্শনে আছেন মেজিয়া ব্লকের প্রশাসনিক আধিকারিকরা । তারা এলাকার মানুষের চিরে ,গুর ও ত্রিপল ত্রাণ বিলি করেন। দামোদরের জলে ডুবে গেছে এলাকার সমস্ত চাষাবাদ জমি। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছে সাধারণ কৃষকেরা। পাশাপাশি শহরের সাথে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে রাস্তায় জমে থাকা জলের জন্য। যান চলাচলের ক্ষেত্রেও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। নতুন করে যদি আবার ডিভিসি জল ছাড়ে তাহলে এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বোটে চেপে বড়জোড়ার বড় মানা-পরিশালপাড়া ঘুরে দেখেন বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। মঙ্গলবার বিজেপির স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে তিনি ওই এলাকা পরিদর্শণ করেন।
ডিভিসি জল ছাড়ায় প্লাবনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর ও আমতায়। ইতিমধ্যেই দামোদর ও মুন্ডেশ্বরীর জল বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। উদয়নারায়ণপুরের ঘোলা, কুরচি, হরিহরপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় বালির বস্তা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় উদয়নারায়ণপুরের বিডিওর নেতৃত্বে প্রশাসনিক বৈঠক হয়।
অন্যদিকে, আমতার ২নং ব্লকের ভাটোরা, চিৎনান এই সমস্ত এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোটা পরিস্থিতি নজরে রাখা হচ্ছে। সোমবারের পর মঙ্গলবারেও প্রশাসনের তরফ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে।
ডিভিসি জল ছাড়ায় মুন্ডেশ্বরী নদীর উপর বাঁশের সেতু ভেঙ্গে বিপত্তি ঘটে বলে জানা গেছে। এর জেরে হাওড়া ও হুগলির যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন। হাওড়ার ভাটোরা থেকে হুগলির মাড়োখানা যাওয়ার একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এই সেতুটি। জলের তোড়ে বাঁশের ভেসে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।