ক্রিকেট বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ক্রিকেট প্রেমীদের চমকে দিয়েছে আফগানিস্তান
নিউজ ডেস্কঃ ক্রিকেট বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে ক্রিকেট প্রেমীদের চমকে দিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। তারা একটি নয়, দুটি বড় বিপর্যয় ঘটিয়েছে। যার কারণে তারা ক্রমাগত ক্রীড়া জগতে শিরোনামে থাকছে। প্রথমে তারা গতবারের বিশ্বকাপজয়ী ইংল্যান্ডকে ৬৯ রানে হারিয়েছে। এরপর তাদের কাছে হারতে হয়েছে ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে। এই দ্বিতীয় জয়ের পর অনেক প্রবীণ ক্রিকেটার তাঁদের মতামত পরিবর্তন করেছেন। প্রাক্তন ভারতীয় কিংবদন্তি গৌতম গম্ভীর সহ অনেকেই দৃঢ় বিশ্বাসী যে এখন আফগান দলকে অবমূল্যায়ন করা উচিত নয়। তারা পাকিস্তানের চেয়ে ভাল খেলছে।
পাকিস্তানকে হারিয়ে আফগানিস্তান প্রমাণ করেছে যে তাদের জয়ে অবাক হওয়া উচিত নয়। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মহম্মদ নবীর মতো বিশ্বমানের স্পিনারে সজ্জিত আফগানিস্তান দল বলেছে যে তাদের এখন যে কোনও দলকে সহজে হারানোর ক্ষমতা রয়েছে। যাইহোক, এই দুটিই একমাত্র ম্যাচ নয় যেখানে আফগান দল দর্শনীয় জয় ছিনিয়ে নিয়েছে। এর আগেও বহুবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বড় দলকে হারিয়েছে তারা।
যে আফগান দলকে একসময় সবচেয়ে দুর্বল বলে মনে করা হতো, সেই দল এখন এত বিপজ্জনক হয়ে উঠল কীভাবে? তিনি কি করলেন যে তাকে এই আশ্চর্যজনক শক্তি দিয়েছে? এসব প্রশ্নের যদি একটাই উত্তর পাওয়া যায়, তা হল ভারতের বন্ধুত্ব। আফগানিস্তান ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক ও খেলাধুলো সব ক্ষেত্রেই ভাল সম্পর্ক রয়েছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট ভারতের কোলে বড় হয়েছে। এ কারণেই আফগানিস্তান ক্রিকেট পুরোপুরি ভারতের কোলে বেড়ে উঠেছে। বিসিসিআই আফগানিস্তান দলের সব খেলোয়াড়কে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দিয়েছে। তাদের গ্রাউন্ড, প্রযুক্তি, কর্মী এবং অন্যান্য অনেক সম্পদ সরবরাহ করা হয়েছে। আফগানিস্তান ক্রিকেটও অনেকবার এটা মেনে নিয়েছে। আফগানিস্তানে একটিও আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নেই। এখনও পর্যন্ত ঘরের মাঠে একটিও আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি তারা। তবে ভারতের তিনটি স্টেডিয়ামকে তারা নিজেদের ঘরের মাঠ হিসেবে বিবেচনা করে। তারা এখানে অনেক সিরিজও খেলেছে। এই তিনটি স্টেডিয়াম হল লখনউ, গ্রেটার নয়ডা এবং দেরাদুন।
২০০৯ সালের অগাস্টে ভারতের মাটিতে আফগানিস্তান দল নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে প্রথম আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছিল। এর পরে তারা ২০১৭ সালে ভারতের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে সিরিজ খেলেছিল। সবগুলো ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয় গ্রেটার নয়ডায়। এর আগে তারা সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে হোম সিরিজ খেলত। আফগানিস্তান ২০১৮ সালের জুনে দেরাদুনে বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের হোম টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলেছিল। বেঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে তারা প্রথম টেস্ট ম্যাচও খেলেছে। এরপরে আফগান দল ভারতে অনেক দলের বিরুদ্ধে তাদের হোম ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট সিরিজ খেলেছে।
২০১৫ সাল থেকে বিশ্বকাপে খেলতে শুরু করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। তখন থেকে বিশ্বকাপে মোট ২০টি ম্যাচ খেলা হয়েছে, যার মধ্যে ৩টিতে তারা জিতেছে। এই তিনটির মধ্যে দুটি জয় বড় দলের বিরুদ্ধে। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে পাকিস্তানকেও হারিয়েছে তারা। চলতি বিশ্বকাপে আফগান দলকে এখন শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচ খেলতে হবে। এর মধ্যে কয়েকটি ম্যাচ জিতলে টুর্নামেন্ট আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠবে।
আফগানিস্তানে ক্রিকেটের ইতিহাস ১৮৩৯ সালের বলে মনে করা হয়, যখন ব্রিটিশ সৈন্যরা কাবুলে কিছু ম্যাচ খেলেছিল। কিন্তু নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত দেশে অস্থিরতার পরিবেশ ছিল। এমন পরিস্থিতিতে ক্রিকেট খেলা সহজ ছিল না। এদিকে পাকিস্তানে পৌঁছনো আফগান শরণার্থীরা সাহস দেখিয়ে ১৯৯৫ সালে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড গঠন করে। যদিও তালিবানরা ক্রিকেট খেলাতে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। তবে তারাই আবার ২০০০ সালে ক্রিকেটকে অনুমোদন দেয়। পরের বছরই তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) থেকে স্বীকৃতি পায়। ২০১৩ সাল নাগাদ আফগান দল আইসিসির সহযোগী সদস্য হয়ে ওঠে।