আরজি কর মামলায় কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে জনগণ

0 0
Read Time:7 Minute, 18 Second

নিউজ ডেস্ক:: বুধবার গভীর রাতে আরজি কর হাসপাতালের তিন দিক থেকে হামলা হয়। হাসপাতালে ঢুকে জরুরি বিভাগ, মেডিসিন স্টোর-সহ বেশ কিছু বিভাগে ব্যাপক হামলা চালায় হামলাকারীরা। ব্যাপক ক্ষতি হয় হাসপাতালের। ঘটনার পর বিধ্বস্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল সংবাদ মাধ্যমকে নিশানা করেন।

আরজি করে চিকিৎসকের মর্মান্তিক পরিণতের পরে বারে বারে প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠেছে। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ পুলিশ কমিশনার বলেন, কীসের প্রমাণ লোপাট, স্বচ্ছ্বতার সঙ্গেই তদন্ত করা হয়েছে।

গত নয় অগাস্ট ভোর রাতে একত্রিশ বছর বয়সী চেস্ট মেডিসিনের স্নাতকোত্তর পাঠরত মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। তার পাঁচ দিন পরেও সেই ঘটনা নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। যা নিয়ে চোদ্দো অগাস্টের রাতে কলকাতা-সহ রাজ্য জুড়ে পথে নামেন মহিলারা।

আরজি করে ঘটনার তদন্তভার ইতিমধ্যেই সিবিআই-এর হাতে তুলে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তারপরেও বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তর খুঁজছেন সাধারণ মানুষ।

এই ঘটনার পরেই বিজেপির তরফে সিবিআই তদন্ত এবং বামেদের তরপে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুলিশকে ১৮ অগাস্ট পর্যন্ত সময় দেন। অনেকেই বলছেন, রাজ্য সরকার যদি এই মামলা সিবিআইঃএর হাতে তুলে দিত, তাহলে কলকাতা হাইকোর্টের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হত না।

মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় শুধু কলকাতা কিংবা রাজ্যে নয়, সারা দেশে আন্দোলন হচ্ছে। কিন্তু তৃণমূল নেতারা আন্দোলন নিয়ে নীরবতা পালন করছেন। সেখানেই উঠছে প্রশ্ন। আরজি করের ঘটনা নিয়ে মুখ খোলার পরেই দলের মুখপাত্রের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেনকে। তৃণমূল সাংসদের চিকিৎসক স্বামী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী এব্যাপারে কোনও কথা বলতে চাননি। আবার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সব বিষয়ে সরব কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও এব্যাপার নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে চাননি।

তবে সুখেন্দু শেখর রায়ের মতো ব্যতিক্রমী কিছু নেতাও রয়েছেন। তিনি জানিয়েছিলেন, আরজি কর নিয়ে মধ্যরাতের বিক্ষোভে অংশ নেবেন. কারণ অন্য বাঙালি পরিবারের মতো তাঁর মেয়ে ও নাতনি রয়েছে।

আরজি করের চেস্ট মেডিসিনের যে সেমিনার হলে চিকিৎসককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল, সেই এলাকা সিল না করেই সামনেই একটি ঘরে পুনর্নির্মাণের কাজ শুর হয়। যদিও জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশ এবং সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের বাধায় তা বন্ধ হয়ে যায়।

এব্যাপারে চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের তরফে প্রমাণ লোপাটের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলা হয়েছে। এব্যাপারে হত্যার ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১০ অগাস্ট স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা আরজি কর হাসপাতালে গিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে বৈঠকের পরে সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দ্রুত কাজ শুরু করতে নির্দেশ দেন বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।

চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্সের তরফে সরকারি নির্দেশ নামা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, পদত্যাগের নামে নাটক করেছেন তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। সরকারি অর্ডার দুটোর মেমো নম্বর-এর সিরিয়াল নম্বর দেখলেই বোঝাযাবে, সন্দীপ ঘোষ-এর বদলি অর্ডার আগেই তৈরি ছিল। যার সিরিয়াল নাম্বার ১২ অগাস্ট, ৮০৭। আর MSVP যাকে ওনার আগেই সরানো হয়েছে তার অর্ডারের মেমো সিরিয়াল ৮১০। অর্থাৎ অধ্যক্ষের পদত্যাগ ও বদলি পুরোটাই নাটক। তাঁরা বলছেন, চিত্রনাট্যর স্ক্রিপ্ট আগে থেকেই তৈরি করে রাখা ছিল।
এদিকে কলকাতা হাইকোর্ট আরজি করের অধ্যক্ষকে অন্য় কলেজের অধ্যক্ষ করার রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে হাইকোর্ট। হাইকোর্টের নির্দেশে ছুটিতে যেতে বাধ্য হন সন্দীপ ঘোষ।

পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে অনেক চিকিৎসক দাবি করেছেন, একাধিক অপরাধী এই ঘটনার পিছনে রয়েছে। কারণ মহিলা চিকিৎসকের গোপনাঙ্গ থেকে ১৫১ গ্রাম বীর্ষ পাওয়া গিয়েছে। যা কোনও এক ব্যক্তির হতে পারে না। এছাড়াও মহিলা চিকিৎসকের শরীরের যে ধরনের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে, তাতে যে পরিমাণ বল প্রয়োগ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তা একজনের হতে পারে না।

আরজি কর হাসপাতালের তরফে শুক্রবার সকালে মৃত চিকিৎসকের বাড়িতে করা ফোনে বলা হয়েছিল মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু কখন, কীভাবে তার উত্তর পাওয়া যায়নি। এরপর হাসপাতালে পৌঁছনোর পরে তিনঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল পরিবারের সদস্যদের। বাবা-মা মেয়ের মুখ দেখতে চাইলেও, তার সুযোগ পাননি। তাঁরা মোবাইলে তোলা ছবি দেখেন। সেই সময় ওই চিকিৎসকের মুখে ছিল রক্ত, চোখে ছিল দাগ, শরীরে কোনও কাপড় চিল না, উভয় পা ছিল সমকোণে। পেলভিক গার্ডেল না ভাঙলে এরকম হতে পারে না। তাঁকে শ্বাসরোধ করে হত্যার চিহ্ন ছিল পরিষ্কার।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!