এক সমৃদ্ধ বৌদ্ধিকচর্চার আধার ‘উদার আকাশ’ প্রকাশিত হল মোস্তাক হোসেনের হাত ধরে
নিজস্ব সংবাদদাতা- উদার আকাশ ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৬, বিশেষ বিষয়, সহাবস্থান ও সমন্বয় সংখ্যাটি উদ্বোধন করলেন পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার মোস্তাক হোসেন। শনিবার পতাকা হাউসে উদার আকাশ পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ পত্রিকার বিশেষ সংখ্যাটি মোস্তাক হোসেন-এর হাতে তুলে দিলেন। এদিন উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশনের পক্ষ থেকে মোস্তাক হোসেন-এর হাতে “দানবীর পুরস্কার” তুলে দেওয়া হয়। সমাজ কল্যাণে অফুরন্ত অবদানের জন্য মোস্তাক হোসেন পথিকৃৎ। তাঁকে সম্মাননা প্রদান করতে পেরে উদার আকাশ পত্রিকা ও প্রকাশন সম্মানিত।
কলেজজীবন থেকেই সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চায় নিবেদিতপ্রাণ তরুণ সম্পাদক ফারুক
আহমেদ। ধারাবাহিকভাবে তিনি নিভৃতে তরুণ প্রজন্মকে উৎসাহিত করে যাচ্ছেন কয়েক দশক ধরে।
ফারুক আহমেদ, মৌসুমী বিশ্বাস ও রাইসা নূর সম্পাদিত উদার আকাশ পত্রিকার ‘ঈদ-শারদ উৎসব সংখ্যা ১৪২৬’ এই সংখ্যার বিশেষ বিষয় রাখা হয়েছে ‘সহাবস্থান ও সমন্বয়’।
বাঙালির দুই মুখ্য সম্প্রদায়ের দুই প্রধান উৎসব ঈদ ও শারোদৎসবকে সামনে রেখে সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও মিলনের জয়গান গাওয়াই উদার আকাশের মূল লক্ষ্য।
সম্পাদকীয়তে ফারুক আহমেদ মুখ্যত দুটি বিষয়ের উপর জোর দিয়েছেন। দেশভাগের পর এপার বাংলার সংখ্যালঘু মুসলমানদের অবস্থা খুবই করুন ছিল। সেই অবস্থা থেকে ধীরে ধীরে নানা রকমের কায়িক শ্রম ও ছোট ছোট ব্যবসার মাধ্যমে কেউ কেউ একটু আধটু আর্থিকভাবে সক্ষম হয়। কিন্তু শিক্ষাদীক্ষায় তাঁদের অবস্থান ছিল একেবারে তলানিতে। সেই অবস্থার বদল শুরু হয় আটের দশকে এবং এই পরিবর্তনে মুখ্য ভূমিকা নেয় আল-আমীন মিশন। এবং পরবর্তীকালে এরই প্রভাবে অন্যান্য মিশনও। এক্ষেত্রে সম্পাদক যথার্থই বলেছেন এই মিশন আন্দোলনে শিল্পপতি মোস্তাক হোসেনের সোনালী পৃষ্ঠপোষকতা। তাঁর এই ছত্রছায়ায় জাতি-ধর্ম- বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সকলেই উপকৃত হয়েছেন এবং নিয়মিত হচ্ছেন। তিনি এই মহান বাঙালি শিক্ষাব্রতী ও শিল্পপতি মোস্তাক হোসেনকে “ভারতরত্ন” দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন।
দ্বিতীয় যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন, সেটিও খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশ পিছিয়ে থাকা সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য সরকারের তরফে বিশেষ ফাণ্ডের ব্যবস্থা করা হোক। এরই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্তনিগম থেকে গ্যারেন্টারমুক্ত লোন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন এই সমাজে গ্যারেন্টার পাওয়া খুবই কঠিন কাজ। এবং কেবল এ কারণের জন্য বহু অভাবী মেধাবী উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
পত্রিকার মাধ্যমে শুধু সাহিত্যচর্চা নয় সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রকাশের উজ্জ্বল উদাহরণ লালমিয়া মোল্লার ‘আসুন সদর আলির পাশে দাঁড়াই’। খুবই অসহায় এই সাহিত্যিক এবং তাঁর পঙ্গু স্ত্রীর প্রতি সাহায্যের মানবিক আবেদন রেখেছেন লালমিয়া মোল্লা এবং সম্পাদক উভয়েই।
উল্লেখ্য, এই বিশেষ সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হয়েছে দানবীর মাননীয় মোস্তাক হোসেন মহাশয়কে।
প্রতিটি সংখ্যার মতো এই সংখ্যায়ও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ-নিবন্ধ স্থান পেয়েছে। “সহাবস্থান ও সমন্বয়” বিষয়ে মহামূল্যবান প্রচ্ছদ নিবন্ধ লিখেছেন স্বনামধন্য প্রাবন্ধিক শেখ একরামূল হক।
সম্প্রতি দেশের দুর্দশা নিয়ে বিশিষ্ট ৪৯ জন বুদ্ধিজীবীর উদ্বেগ এবং এরই প্রতিক্রিয়ায় সংঘ পবিবার ঘনিষ্ঠ ৬২ জন তথাকথিত বুদ্ধিজীবীর তরজা নিয়ে এক সংক্ষিপ্ত অথচ মূল্যবান নিবন্ধ লিখেছেন অশোক মজুমদার।
প্রয়াত সাহিত্যিক সোহারাব হোসেনের ‘মাঠ জাদু জানে’ উপন্যাস নিয়ে দারুন আলোচনা করেছেন গবেষিকা তুহিনা বেগম।
‘পাতিসরে রবীন্দ্রনাথ’ নিবন্ধে মোহাম্মদ শামশুল আলম বিস্তারিতভাবে কবিগুরুর প্রেক্ষিত তুলে ধরেছেন।
রাজনীতিবিদ ও প্রাবন্ধিক মইনুল হাসান দেশভাগ পরবর্তী আমাদের রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়ন নিয়ে তথ্য ও তত্ত্বের সঙ্গে বাস্তব অভিজ্ঞতা মিশিয়ে মননশীল নিবন্ধ উপহার দিয়েছেন। এই আলোচনায় অন্যদের দোষত্রুটি নিয়ে বিশ্লেষণ আছে কিন্তু আত্মসমালোচনার কথাও জোর দিয়ে বলেছেন মইনুল হাসান।
সাহিত্যিক গৌরকিশোর ঘোষ নিয়ে চর্চার ধারা বেশ কম। সেই প্রেক্ষিতে আবেদা সুলতানার ‘গৌরকিশোর ঘোষের ছোট গল্পে রাজনীতি’ নিবন্ধ সেই অভাবপূরণে সহায়ক হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।