ঐতিহ্য সম্পন্ন বনেদি বাড়ির রীতি

0 0
Read Time:4 Minute, 35 Second

নিউজ ডেস্ক: একটি ঐতিহ্যবাহী বনেদি বাড়ির পুজো হয় সাধারণত একটা পরম্পরা মেনে ও একটা আলাদা ধাঁচে। যেমন, পুনশ্চঃ আঁকা ঠাকুরদালান, সঙ্গে থাকবে সোনার ফুলের স্তম্ভ, পুরনো ঝাড়বাতির বাহার, দালানের মধ্যবর্তী আঁকা হবে আলপনা যেখানে বসে বাড়ির মহিলারা করবেন পুজোর যোগান এবং দেবীকে করবেন স্বাগতম।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি সেই ঐতিহ্য বয়ে নিয়ে আসার ক্ষমতা আর রাখে না। যে সময়ে ঐতিহ্যবাহী জমিদাররা পারিবারিক বনেদি পূজার সূচনা করেন, সেই সময়ে আচার-অনুষ্ঠান, পরম্পরা, ঐতিহ্য সমস্ত কিছুকে আকর্ষণীয় করে তুলে এক অন্য মাত্রায় হতো পুজো। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিবর্তন ঘটেছে। সেই পরিবর্তন কিছুটা হয়েছে আর্থিক দিক থেকেও, সম্পদের টানাপোড়েনের কারণেও, আবার ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার প্রচেষ্টাতেও।

বছরের পর বছর ধরে হয়ে আসা বনেদি বাড়ির পুজোতে সম্পদ অনুষ্ঠানের ঝলকানো প্রদর্শনীতে খরচ হয় বেশ ভালো মাত্রাতেই। তবে বর্তমান চেতনায় তাকে জীবিত রাখা একটু হলেও অসুবিধার মুখে পড়ে। রীতির দিক থেকে দেখতে গেলে বনেদি বাড়ি গুলির আঠারো শতক-ঊনিশ শতক থেকে চলে আসা রীতিতে পরিবর্তন এসেছে হালকা, জল পড়েছে আধুনিকতার। তবে বজায় রয়েছে কঠিন পরম্পরা।

দেখতে গেলে, শোভাবাজার রাজবাড়িতে আঠারো শতকে শুরু হয় দুর্গাপুজো। সেই সময় ঠাকুরদালান সজ্জিত করা হতো ভালোভাবে এবং কাঠামো থেকে প্রতিমার রূপান্তর হওয়া পরিবারের সদস্যরা বসে বসে দেখতেন। সব থেকে বড় ঐতিহ্য ছিল এখানকার রীতি। বিসর্জনের সময় আগে আনা হতো নীলকন্ঠ পাখিকে। তবে বর্তমান দিনে তার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় কাদামাটির মডেল।

অন্যদিকে যদি রায় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোর কথা বলি, তবে সেই বাড়ির পুজো চালু হয়েছিল মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় থেকে। পুজো হত আটচালায়। এমনকি প্রজন্ম পর প্রজন্ম চালু ছিল সেই রীতি। দেবী দুর্গার পাশাপাশি বানানো হতো শিব ও ভগবান রামের মূর্তিও। সাবেকি বাড়ির পুজোয় দেবী দুর্গার দুপাশে রাখা হতো সেই মূর্তি। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সম্পদ রক্ষার খাতিরে বাদ পড়ে যায় এইসব রীতি।

একইভাবে রানী রাসমণির বাড়ির পুজোতেও কিছু রীতি ব্যবহৃত হয়েছে গোড়ার দিকে। ১৯ শতক থেকে চলে আসা এই পুজোতে বিশেষ নজর থাকতো ভোগের দিকে। কারণ পুরো ভোগ বানানো হতো গঙ্গা জলে এবং সঙ্গে রীতি ছিল কুমারী পূজো’র। কুমারী পূজো চলাকালীন সাজ হতো তিন দিন ধরে। তবে বর্তমানে ভোগে গঙ্গাজলের রীতি প্রচলিত আছে বলে সন্দেহ থাকে।

ছাতু বাবু এবং লাতু বাবু বাড়ির পুজোতেও হয়ে আসা কিছু রীতিতে পড়েছে ভাঙ্গন। আগে যেখানে দেবী দুর্গা পারিবারিক সূত্রে পাওয়া অলংকারে সুসজ্জিত থাকত। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো একটি অত্যাশ্চর্য ‘নওলখা নেকলেস’।

এরকমভাবে বনেদি বাড়ির কিছু রীতিতে পড়েছে বাঁধা, ঘটেছে বদল। সম্পদ রক্ষায়, ঐতিহ্য বজায় রাখতে, পরম্পরা মাথায় রেখে যে রীতির প্রচলন রাখা উচিত তা রেখে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিয়ে এনেছে নিজেদের দায়িত্ব। তবে পুজো হয়েছে, হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হওয়ার আসা রাখে বনেদি বাড়ির কুলপতিরা।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!