শিশুকন্যা রূপে পূজা নেন দেবী দুর্গা

0 0
Read Time:5 Minute, 2 Second

নিউজ ডেস্ক:: বনেদি বাড়িগুলিতে কোথাও দুর্গা হর পার্বতী রুপে পূজিতা হন কেউবা আবার যেমন দুর্গতিনাশিনী রুপে পূজিতা হন। আবার কোথাও তিনি পূজা নেন অভয়া রূপে। তাঁর নীল, কালো অনেক রূপও আছে কিন্তু হুগলীর এক পরিবারে দুর্গা পূজিতা হন শিশুকন্যা রূপে। এই পূজার দেখা মিলবে জেলার বিশ্বরতলার চট্টোপাধ্যায় পরিবারের ঠাকুরদালানে গেলে।

হুগলী জেলার বিশ্বেশ্বরতলার এই চট্টোপাধ্যায় বাড়ির পুজো বাবু বাড়ির পুজো নামে খ্যাত। এই পুজোর সূত্রপাত ঘটে সাড়ে তিনশো বছরেরও আগে এই পরিবারের আদিকর্তা পুরন্দর চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে। প্রথম দিকে এই বাড়ির পুজা মনসা দেবীর মঞ্চে হলেও পরিবারের আরেক বংশধর গৌরমোহন চট্টোপাধ্যায় এই পুজোকে স্থানান্তরিত করে নিজেদের বসতবাটিতে নিয়ে আসেন বাংলা ১১৬৯ সনে। সেই থেকে পুজা এই স্থানেই হয়ে আসছে।

এই বাড়ির ঠাকুরদালানটি তিন থাম বিশিষ্ট, ঠাকুর দালানের সামনেই রয়েছে নাটমন্দির। এই বাড়ির প্রতিমা একচালা ও সাবেকি সাজের হয় এবং এই বাড়ির প্রতিমার গায়ের রঙ হয় শিউলি ফুলের বোঁটার মত। জন্মাষ্টমীর পরের দিন অর্থাৎ নন্দোৎসবের দিন দেবীর কাঠামো পুজোর মাধ্যমে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়।
এই পরিবারের অন্যতম একটি বিশেষত্ব হল, এখানে দেবীকে শিশুকন্যা রূপে পুজা করা হয় এবং বাড়ির প্রত্যেক সদস্যই আনন্দ সহকারে এই পুজায় সামিল হন।

এই বাড়ির পূজার সঙ্কল্প হয় বাড়ির দীক্ষিত মহিলাদের নামে। ষষ্ঠীর দিন থেকে পূজো শুরু হলেও চণ্ডীপাঠ শুরু হয় মহালয়ার পরের দিন থেকে। দুর্গাপূজার সাথে সাথে পুজা হয় বাড়ির শালগ্রাম, বানেশ্বর শিব ও গণেশের। এছাড়াও এই বাড়িতে নবমীর দিন কুমারী পূজার চল রয়েছে।

এই বাড়ির পুজো সম্পূর্ণ বৈষ্ণব মতে হয়, সেইজন্য কোনো আমিষ ভোগ দেবীকে নিবেদন করা হয় না। এই কারণে মহালয়ার পরের দিন থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত এই বাড়িতেও সম্পূর্ণ নিরামিষ আহার রান্না হয়। দেবীর ভোগেও থাকে অনেক বৈচিত্র্য। বাল্যভোগে থাকে খিচুড়ি, ভাজা ও পায়েস, দুপুরের ভোগে থাকে অন্নভোগ, পোলাও ও তরকারিসমূহ ও মিষ্টি, সন্ধ্যার ভোগে থাকে লুচি, ভাজা, নাড়ু এবং সন্দেশ। এছাড়াও এই বাড়িতে দেবীর ভোগে মোচা ও থোর দেওয়ার চল রয়েছে ও ৫১ রকমের ভোগ প্রদান করা হয়। এবং দশমীতে দেওয়া হয় পান্তাভোগ, দধিকর্মা ও মিষ্টান্ন।

প্রথম দিকে এই বাড়ির পুজো হত তন্ত্রমতে এবং সাথে ছাগবলিও হত। কিন্তু একবার বলির ছাগলটি হাড়িকাঠ থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় গৌরমোহন বাবুর কাপড়ের আড়ালে। সেই থেকেই এই পরিবারে পশুবলি বন্ধ হয়ে যায় এবং পরিবর্তে ফল ও সবজি বলি শুরু হয়। প্রধানত লেবু ,ছাচি কুমড়ো, আখ, কলা বলি দেওয়া চল আছে।

দশমীর দিন বারবেলার পূর্বেই দশমী পুজো শেষ হয় এবং সূর্যাস্তের পুর্বেই দেবীপ্রতিমাকে বিসর্জন দেওয়া হয় বিশ্বেশ্বরতলার দুধপুকুরে । প্রতিমাকে কাঁধে করে শোভাযাত্রায় নিয়ে যায় বাড়ির ছেলেরা। বিসর্জনের সময় মিত্র বাড়ির দুর্গা প্রতিমা আসে এই বিশ্বেশ্বরতলাতে। বংশপরম্পরায় কথা আছে যে বাবু বাড়ির দুর্গা প্রতিমা বড় বোন ও মিত্র বাড়ীর দুর্গা প্রতিমা ছোট বোন ।বড় বোন ও ছোট বোন নিরঞ্জনের আগে দেখা করেন। এভাবেই বংশে পরম্পরায় নিষ্ঠা সহকারে এই বাড়ির পুজো হয়ে আসছে।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!