কর্কট রোগ সচেতনতার জন্য ওয়াকাথন-এ কয়েক শো মানুষের পদযাত্রা ও আলোচনাচক্র
নিউজ ডেস্ক::ক্যান্সার মানেই শিয়রে মৃত্যু নয়, বরং রোগের উপশম সম্ভব যদি তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে।এই বিশ্বাস নিয়ে জাতীয় ক্যানসার সচেতনতা দিবস পালন করল মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের মেডিকা অনকোলজি বিভাগ। পদযাত্রা “ওয়াকাথন”এর মাধ্যমে, রবিবার সকালে। ক্যান্সারজয়ী মানুষ, বিভিন্ন এনজিও, সাধারণ মানুষ, পড়ুয়া, মেডিকা’র পদাধিকারী চিকিৎসকরা এবং হাসপাতাল কর্মীরা কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামের ৬ নম্বর গেট থেকে পদযাত্রা শুরু করে অজয়নগর, হাইল্যান্ড পার্ক, সিংহবাড়ি বাসস্ট্যান্ড হয়ে মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছন।
এই বছর মেডিকা অনকোলজি বিভাগে জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবসের থিম ছিল “প্যালিয়েটিভ কেয়ার”। এই উপলক্ষে সংস্থার অনকোলজি বিভাগের তরফে জানানো হয় যে, শুধু নভেম্বর মাস থেকে রেডিওথেরাপি শুরু হবে এমনটা নয়, তার সঙ্গেই এমন স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা হবে যেখানে পূর্ব ভারতে প্রথমবার বাড়িভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার পরিষেবা ক্যান্সার রোগীদের জন্য শুরু হবে ।
পদযাত্রায় গায়ক অনুপম রায়, অভিনেতা চন্দন সেন, সুরকার কল্যাণ সেন বরাট সহ অনেক বিশিষ্টজনেরা অংশগ্রহণ করেন। পরে হাসপাতাল চত্বরে তাঁরা ক্যান্সার এবং ক্যান্সার রোগীদের নিয়ে তাদের ভাবনা এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন উপস্থিত দর্শকদের সঙ্গে।
পদযাত্রার সূচনায় ছিলেন চিকিৎসক অলোক রায় – চেয়ারম্যান, মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটাল, ডা: সৌরভ দত্ত – ডিরেক্টর ( মেডিকা ক্যান্সার প্রজেক্ট ) মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, ডা: সুবীর গাঙ্গুলি- সিনিয়র কনসালটেন্ট রেডিয়েশন অনকোলজি , মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, ডা: সুদীপ দাস – কনসালট্যান্ট মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট সহ অন্যান্যরা।
অলোক রায় বলেন , “প্রতি বছর ৭ ই নভেম্বর ভারত জাতীয় ক্যান্সার সচেতনতা দিবস পালন করা হয়ে থাকে। ক্যান্সার স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা করা সম্ভব যদি শুরুতে ধরা পড়ে। খুব দেরিতে ধরা পড়লে, দেখা গিয়েছে চিকিৎসার খরচ অনেকটাই বেড়ে যায়। মেডিকার অনকোলজি বিভাগ এই মাস থেকে রেডিওথেরাপি এবং বাড়ি ভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ার মাত্রিক পরিষেবা দেওয়া শুরু করছে।”
সৌরভ দত্ত বলেন – “এটা খুবই জরুরি যে সমাজ যেন ক্যান্সার রোগীদের ক্ষেত্রে সহানুভূতির জায়গায় নৈতিক সমর্থন করে।” সুবীর গাঙ্গুলি জানান – “এই বছর মেডিকা অনকোলজি বিভাগ প্যালিয়েটিভ কেয়ার থিম হিসেবে গ্রহণ করেছে। ভারতে প্রায় ২.২৫ মিলিয়ন ক্যান্সার রোগী রয়েছে । প্রতি বছর ১ মিলিয়ন নতুন ক্যান্সারের কেস হয়ে চলেছে ভারতে। উপসর্গের উপশম না হওয়া, জীবনযাপনের গুণগত মান নিম্নগামী হওয়া, জীবনের শেষ অংশের যথাযথ খেয়াল না রাখা এবং মাত্রাতিরিক্ত আর্থিক বোঝার সমস্যা প্যালিয়েটিভ কেয়ারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেয়ারগিভারের অপ্রতুলতা, যাতায়াতের খরচ, রোগীর অ্যাম্বুল্যান্স মাধ্যমে যেতে না পারার পরিস্থিতি এবং টার্মিনাল ক্যান্সার রোগীদের প্যালিয়েটিভ কেয়ারের জন্য নিয়মিত চিকিৎসা পরিষেবা কেন্দ্রে যেতে না পারার সমস্যা তো রয়েছেই । তাই আমরা বিশেষ স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তৈরি করছি যেখানে ক্যান্সার রোগীরা বাড়িতে থেকেই প্যালিয়েটিভ কেয়ারের পরিষেবা পেতে পারেন।”
দুপুরে সায়েন্স সিটি মিনি অডিটোরিয়ামে এক আলোচনাচক্রে ক্যান্সার চিকিৎসায় তাদের নতুন পরিষেবা – বাড়িভিত্তিক প্যালিয়েটিভ ক্যান্সার কেয়ার পরিষেবার ঘোষণা করা হয়। আপাতত পূর্ব ভারতে এইরকম পরিষেবার দ্বিতীয় কোনও নজির নেই। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন খ্যাতনামা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা। ছিলেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। এছাড়াও ছিলেন বহু লড়াকু মানুষ যাদের পরিবারের প্রিয়জন ক্যান্সারকে হারিয়েছেন সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও।
“প্যালিয়েটিভ কেয়ার”- এর অর্থ হল বিশেষ স্বাস্থ্য পরিষেবা যা বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক, শুশ্রূষাকর্মী, মনোবিদ এবং অন্যান্য মেডিক্যাল স্টাফ সদস্য দ্বারা বিভিন্ন উপসর্গ ও চাপ থেকে স্বস্তি দিতে পারা, যা কর্কটের মত রোগের ক্ষেত্রে বেশি দরকার।