অর্থের অভাবে কষ্টে দিনযাপন করছে আশ্রমের শিশুরা, বুনিয়াদপুরে সাহায্যের আর্জি

0 0
Read Time:4 Minute, 6 Second

নিজস্ব সংবাদ, বুনিয়াদপুর: আশ্রম রয়েছে, রয়েছে বাচ্চারাও, কিন্তু সঠিক পরিচর্যা ও সাহায্যের অভাবে রীতিমত কষ্টে দিনযাপন করতে হচ্ছে আশ্রমের বাচ্চাদের। ঘটনাটি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুরের বড়াইল গ্রামে। সেখানেই রয়েছে ‘বড়াইল উপজাতি কল্যান সংঘ’ নামে বাচ্চাদের এক আশ্রম। বর্তমানে সেখানে রয়েছে প্রায় ২৭ জন ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে।

ব্যস্ততম জীবনে বুনিয়াদপুরের অনেকেই এর নাম জানে না অথবা জেনেও বিস্তর মাথা ঘামায় না। কিন্তু একজন ব্যক্তি তার একক প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে এই আশ্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যিনি হলেন সুকুমার রায় চৌধুরী।

জানা গিয়েছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষদের সেবার জন্য তিনি যাদবপুর থেকে উত্তরবঙ্গে আসেন। এরপর দেখা হয় স্বর্গীয় প্রজ্ঞানন্দ মহারাজের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে থাকার সুবাদে তিনি ভারত সেবাশ্রমে যুক্ত হন এবং নিজের জীবনকে মানুষের সেবায় নিয়োজিত করেন। আর তারপরেই ১৯৯৫ তিনি নিজে হাতে তুলে নেন ‘বড়াইল উপজাতি কল্যান সংঘ’-এর ভার। আর ফেরা হল না তার নিজের বাড়ি। সময়চক্রে এই আশ্রমই হয়ে উঠল তাঁর বাড়ি।

ধীরে ধীরে দক্ষ পিতার মত তিনি আগলে রাখতে শুরু করলেন আশ্রম ও সেখানে থাকা বাচ্চাদের। প্রথমাবস্থায় অনেকে এগিয়ে এলেও এখন আর কেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। কালচক্রে সুকুমার বাবু এখন ৮৯ বছরে পা দিয়েছেন। আশ্রমের বাচ্চাদের কাছে তিনি ‘মাষ্টারমশাই’। দু’বেলা পেট ভরে খাওয়ার দিতে হিমসিম অবস্থা হলেও তাঁর শিক্ষা দেওয়াতে নেই কোনও ত্রুটি। তাঁর একটাই লক্ষ্য কষ্ট করে হলেও তাঁর আশ্রমের বাচ্চারা প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠুক। ব্রতী হোক তাদের জীবনের লক্ষ্য পূরণে।

আবেগপ্রবণ হয়ে সুকুমার বাবু বলেন, “বাচ্চাগুলোকে ঠিক মত খেতে দিতে পারি না, বাচ্চাদের পড়াশুনো করার জায়গাও নেই। কেউ একটু সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। অনেক বয়স হল আমারও। তাই এখন একটাই চিন্তা আমি চলে গেলে এই আশ্রমের কী হবে! সরকারি দফতরে সাহায্য চেয়ে বহু আবেদন করেছি। সেই সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সবাই। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।”

এখন নিজের জন্য নয়, অন্তত আশ্রমের ছোট-ছোট ছেলে-মেয়েগুলোর কথা ভেবে দু’চোখের ঘুম উড়েছে সুকুমার বাবুর। বারংবার সাহায্যের আর্জি জানিয়েও কোনও সুফল মেলেনি। তাই এখন তাঁর আর্জি একটাই কেউ অন্তত এগিয়ে আসুক এবং তাঁর আশ্রম ও অসহায় বাচ্চাগুলোর পাশে দাঁড়াক। সামান্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলে হয়ত মুখে হাসি ফুটতে পারে সুনিতী মুর্মূ, ঊর্মিলা মার্ডি কিংবা মির্ময় রায়ের মত অনাথ বাচ্চাগুলোর মুখে। উজ্জ্বল হতে পারে তাদের মূল্যবান ভবিষ্যৎও।

Happy
Happy
0 %
Sad
Sad
0 %
Excited
Excited
0 %
Sleepy
Sleepy
0 %
Angry
Angry
0 %
Surprise
Surprise
0 %

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!