সলিলসমাধি, ঘাটে ঘাটে, অ্যান্ডারসন থেকে আইএলএসএস, জলে জলেই শতবর্ষে
নিউজ ডেস্ক ::একশো বছর আগের ঘটনা।
তখনকার শহর কলকাতার গণ্যমান্যদের অনেকে গ্রীষ্মকালের বৈকালিক ও সান্ধ্য অবসর বিনোদনের জন্য পৌঁছতেন বাবুঘাটে।
তার মাঝেই ছন্দপতন! তাঁদের চোখের সামনেই গঙ্গার স্রোতে ভেসে তলিয়ে যাচ্ছিল একটি ছেলে। সঙ্গে সঙ্গে সবাই অস্থির হয়ে উদ্ধার করতে চাইলেন। বিধি বাম! জলেই নামতে পারলেন না কেউ। কারণ, উপস্থিত কেউ সাঁতার জানতেন না। সকলের সামনেই সলিলসমাধি ঘটল ছেলেটির।
ভারাক্রান্ত মনে সবাই সিদ্ধান্ত নিলেন, আর নয়। জলে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচাতে নিজেরাই গঠন করলেন সমিতি, আহিরীটোলা ঘাটের কাছে।
সালটা ১৯৯২। বন্দরের জমিতে তখনকার দু’টাকা ভাড়ায় সমিতির আস্তানা। আজও সেই আস্তানার দু’টাকা করে ভাড়া দিচ্ছেন কর্তারা। যদিও তা এখন স্থানীয় একটি ক্লাবের দখলে।
এভাবেই গড়ে উঠেছিল ‘ইন্ডিয়ান লাইফ সেভিং সোসাইটি’ বা আইএলএসএস। যা আজ শতবর্ষ উদযাপন করে চলেছে। সাত হাজারের বেশি সদস্য নিয়ে প্রতি বছর প্রায় পাঁচ হাজার শিশুকে জলক্রীড়ার উপযুক্ত করে তোলা হয় স্বল্প দক্ষিণার বিনিময়ে। সমিতি এখন সদস্য ও তাঁদের বন্ধু, পরিবারদের সান্ধ্য মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠলেও মূল লক্ষ্য থেকে তাঁরা সরে যাননি। এখনও যুবকদের বিনামূল্যে জীবন রক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। প্রশিক্ষিতরা নানা জায়গায় কাজ করেন।
এখানেই প্রশিক্ষণ দিতেন প্রবাদপ্রতিম অনিল দাশগুপ্ত, মতি নন্দী’র ‘ক্ষিদ্দা’ যাঁর আদলে গড়া। ‘কোনি’ নামের যে ছায়াছবিতে ছাত্রী হয়েছিলেন এখানেই প্রশিক্ষিত নাফিসা আলি, শ্রীপর্ণা ব্যানার্জীরা। আজ আর সে সমিতি আহিরীটোলাতে নয়, ঠিকানা বদল করে রমরমা করে চলেছে রবীন্দ্র সরোবরের পূর্ব প্রান্তে জন অ্যান্ডারসনের বাড়িতে। একটি ইনডোরে ও একটি আউটডোর সুইমিং পুল সহ যে জায়গাটাকে এখনও অনেকেই চেনেন অ্যান্ডারসন ক্লাব বলে।
শতবর্ষ উদযাপনের সূচনা হয়েছিল গত বছর। সূচনায় ষাটোর্ধ্ব যাঁরা ত্রিশ বছরেরও বেশি সমিতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরকে গোল্ড কার্ড দেওয়া হয়েছিল। সম্বর্ধিত করা হয়েছিল ৮৮ বছর বয়সের সর্বজ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মী লাল বাহাদুর গুরুংকে, যিনি অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় দিয়েছেন এখানেই।
শতবর্ষ পূর্তি উদযাপনের সমাপন হবে সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে। সমাপ্তি অনুষ্ঠানের সূচনা আগামীকাল ১৪ আগস্ট সকাল দশটায় ছোটদের বসে আঁকো প্রতিযোগিতা দিয়ে। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় জলক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ শেষে ত্রিজয় দেবের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। স্বাধীনতা দিবসের দিন সকাল সাড়ে ন’টায় পতাকা উত্তোলনের পর দেশাত্মবোধক সঙ্গীত, সকাল দশটায় এক মাইল সাঁতার প্রতিযোগিতা, সাড়ে দশটায় বৃক্ষরোপণ। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান , সাতটায় গোল্ড কার্ড বিতরণ। পরের সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ছোটদের নিবেদন – আবোলতাবোল।
সতেরোর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বয়স্কদের নিবেদন কবিতা ও গানে রঙ্গ রসিকতায় ভরা ‘হেসে নে, দু’দিন বৈ তো নয়! আঠারোর সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ফ্যাশন শো। ঊনিশে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় সুজয় ভৌমিকের বলিউডি গানবাজনা।
বিশ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় নাটক উৎপল দত্তের ‘চৈতালি রাতের স্বপ্ন’। একুশের সকাল সাড়ে দশটায় রবীন্দ্র সরোবরের ফুটবল প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মহিলাদের অনুষ্ঠান ‘ফিরে দেখা’! বাইশ আগস্ট বাইশের সন্ধ্যা সাতটায় আইএলএসএস এর শতবর্ষ পূর্তি তথ্যচিত্র। সাড়ে সাতটায় কেক কাটার পরে বৈদূর্য বোসের সম্বর্ধনা। রাত আটটায় অঙ্কিতা ভট্টাচার্যের যন্ত্রসঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠানের ইতি।