স্বাধীনতার পরে ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যা – ব্যাপক রূপান্তর
নিউজ ডেস্কঃ '৪৭ এর স্বাধীনতার পরেই ভারতের সমস্ত শিক্ষিত মানুষ বুঝেছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে জোর দিতে না পারলে ভারতের উন্নতি নেই। এই কথা প্রথম উপলবদ্ধি করেন জহরলাল নেহেরু। তিনি উপলবদ্ধি করেছিলেন, আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির ওপর স্বাধীন ভারতের শিল্পায়নের অগ্রগতি নির্ভর করছে। প্রযুক্তির উন্নতির জন্য তিনি সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নেহরুর উদ্যোগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়ে গবেষণার জন্য প্রায় ৫০টি জাতীয় গবেষণাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে ভারতের বিজ্ঞান গবেষণা দ্রুত এগিয়ে চলে।
এই বিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে এই বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম হলেন প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, হােমি জাহাঙ্গির ভাবা, ড. বিক্রম সারাভাই এবং শান্তিস্বরূপ ভাটনগর। হােমি ভাবার উদ্যোগে ভারতে টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ', 'অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন অব ইন্ডিয়া' স্থাপিত হয়। ফলে ভারতের সামনে প্রসারিত হয় নতুন বিজ্ঞান জগতের। একই সঙ্গে ভারত উপলবদ্ধি করেছিল,এই বিপুল জনসংখ্যার দেশে কৃষির উৎপাদন অনেক বাড়াতে হবে। এ বিষয়ে অসামান্য অবদান রাখেন বিজ্ঞানী সি. সুব্রন্থনিয়াম। তিনি গবেষণাগারে উন্নততর কৃষিবীজ তৈরি করে কৃষি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করেন। জলসেচের ব্যাপক প্রসারের ফলে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন কৃষিজমি জলসেচের আওতায় আসে।
আমেরিকার বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের মতো ভারতেও গড়ে ওঠে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনােলজি। সেই অনুসারে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মৌলানা আবুল কালাম আজাদ ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে (১৮ আগস্ট) পশ্চিমবঙ্গের খড়গপুরে এই প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে মাদ্রাজ, বােম্বাই, কানপুর ও দিল্লিতে আই. আই. টি. প্রতিষ্ঠিত হয়।
মহাকাশ গবেষণায় ভারতের সাফল্য ব্যাপক। সােভিয়েত ইউনিয়নের সহযােগিতায় ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে ‘ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা’ (ইসরো) গড়ে তােলা হয়। ভারতের মহাকাশ গবেষণা কর্মসূচিতে অসামান্য অবদান রাখেন পদার্থবিদ ড. বিক্রম সারাভাই। এজন্য তাকে ভারতের মহাকাশ কর্মসূচির জনক’ বলা হয়। সােভিয়েত রাশিয়ার সহযােগিতায় ভারতে পরমাণু শক্তি গবেষণার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটে। ভারত ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে (১৮ মে) রাজস্থানের পােখরানে প্রথম পারমাণবিক বােমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এভাবেই একের পর এক পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারতের বিজ্ঞান গবেষণা ও প্রযুক্তি বিদ্যা দ্রুত এগিয়ে চলে। তারই পরিণাম ‘চন্দ্রযান-3’ এখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে চাঁদের দিকে।